পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী হল। পশার তো ভারি, সারাদিন হা করে বসে থাকে রুগীর জন্য, একটা টাকা দিলেই ছুটে আসবে। চারটিাকা কোথায় আদায় করে জানো চাদেৱ-মা ? অন্য ডাক্তার ডাকবার সময় নেই, এদিকে রুগীরা যায় যায় অবস্থা, তখন । আবার বলে আট টাকা করবে !! এমন হাসি পায় মাগীর কথা শুনলে |’ হাসিবার জন্যই বোধ হয় যশোদার ঝকঝকে উঠানের একটা কোণ পিক ফেলিয়া ভাসাইয়া দেয়। তিন চার দিন আগে অতসী তার ডাক্তার স্বামীর ফির সম্পর্কে কথা বলিয়াছিল, যশোদার কাছে সে কথার ফাকি ধরাইয়া দেওয়ার জন্য আজ পৰ্য্যন্ত বনলতা সযত্নে কথাগুলি মনের মধ্যে পুষিয়া রাখিয়াছে। এমনি চুপি চুপি আরও কত জনকে বলিয়াছে কে জানে, হয়তো আরও সপ্তাহখানেক ধরিয়া বলিয়াই চলিবে । যেখানে সেখানে পানের পিক ফেলার স্বভাবের জন্য একটা কড়া কথা বলিতে গিয়া যশোদা চুপ করিয়া গেল। হঠাৎ তার মনে হইয়াছে, বনলতার মাথাটা যেন একটু খারাপ। বাড়ীতে যারা আসিতেছে তাদের সকলের মানসিক অবস্থাই কমবেশী অস্বাভাবিক, কিন্তু বনলতার মন যেন স্বাভাবিকতার স্তর পার হইয়া একটু বেশী রকম আগাইয়া গিয়াছে। অতসীর সঙ্গে বনলতার খুব ভাব, তাস খেলার লড়াই-এ প্রায় রোজই তারা দু’জনে মিলিয়া একটি পক্ষ গঠন করে। বনলতা কথা বলে না। অনুরূপার সঙ্গে। অনুরূপ প্রফেসর সুনীল সেনের স্ত্রী। মানুষটা একটু হাবাগোবা ধরণের, বড়ই নিরীহ । যে যা বলে তাই সে মানিয়া নেয়, কারও সঙ্গে ঝগড়া করে না । এরকম গোবেচার মানুষের সঙ্গে বনলতার কথা বন্ধ করার কারণটা যশোদা কোন মতেই ভাবিয়া পায় না । এরকম খাপছাড়া যুক্তিহীন ব্যাপার যশোদাকে পীড়া দেয়। কতকটা নিজের বিরক্তি দূর করিবার উদ্দেশ্যেই সে ভাবে, কারণ যাই থাক, দু’জনের মধ্যে ভাব করাইয়া দিলে দোষ কি ? জিজ্ঞাসা করিতে বনলতা বলে, “কথা বলব না কেন, বলি তো ?” যশোদা বুঝিতে পাৱে অনুরূপার সঙ্গে সে যে কথা বলে না তাও বনলতা স্বীকার করবে না, কথাও বলিবে না । এ চাল যশোদা জানে, তাই বনলতার সঙ্গে সময় নষ্ট না করিয়া সে ধীরে ধীরে অনুরূপাৱা পাশে গিয়া বসে, বনলতা