পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৫৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

शविक अहावनी খাইতে খাইতে আমি নিজে কোন দিকে চলিলাম তাহার পর্যন্ত কিছু স্থিরতা রহিল। না। নিজেকে টানিয়া হিচড়াইয়া একটা খাড়াইএর উপর তুলিয়া কোন দিকে নামিলে যে হাত-পা ভাঙিয়াও প্ৰাণটা বজায় রাখা যাইবে, ঠিক করিতে পারি না, যেদিক দিয়া উঠিয়াছি, সেদিকে নামার কথা ভাবিলেও হৃদিকম্প হয়। হাত আর হাঁটুর চামড়া ছিাড়িয়া রক্ত পড়িতে লাগিল, মাসলগুলি ছিড়িয়া পড়িতে চাহিল, এমন মাথা ঘুরিতে লাগিল যেন পৃথিবীর ঘূর্ণিত গতি প্ৰত্যক্ষ করিতেছি A. অবশেষে একবার যখন হাত ফাঁসকাইয়া কুড়ি ফিট আন্দাজ গড়াইয়া একটা গাছের গুড়িতে আটকাইয়া গেলাম, তখন আর উঠিবার চেষ্টা।মাত্ৰ " না করিয়া মনে মনে বলিলাম, থাক যথেষ্ট হইয়াছে। সেইখানে শুইয়া শুইয়া পকেট হইতে বিস্কুটের গুড়া বাহির করিয়া মুখে পুরিতে লাগিলাম এবং চারিদিকে চাহিয়া প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলি উপভোগ করিতে আরম্ভ করিলাম। ভাবিলাম, একেবারে শুকনা শিলার গায়ে এই গাছটা গজানো না জানি কোন নিষ্ঠুর দেবতার কীতি। ঐ তো তলা দেখা যাইতেছে, গড়াইয়া পড়িলেই হইত। জীবনের উদেশ্যটা তাহা হইলে কিছু কিছু বোঝা যাইত নিশ্চয় । ঘণ্টাখানেক বিমাইবার পর উঠিবার চেষ্টা করিলাম। কোনো মতে গাছটা ধরিয়া উঠিয়া দাড়াইয়া উপরের দিকে চাহিয়া স্পষ্ট বুঝিলাম নিজের ইচ্ছায় যেটুকু নামি নাই শত ইচ্ছা করিলেও সেটুকু আর উঠতে পারিব না। নানাবিধ কসরতের সাহায্যে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই নিচে নামিয়া পড়িলাম । সোজা হইয়া দাড়াতেই দেখি, চমৎকার । ত্রিশগজ তফাতে পাহাড়ী উনানে একটা ভাতের হাঁড়ি চাপানো রহিয়াছে এবং নিকটে যে রাধুনী বসিয়া আছেন তিনি নিঃসন্দেহে বাঙালী ভদ্রলোক । মাতালের মতো হেলিয়া দুলিয়া নিকটে গেলাম। প্রশ্ন করিলাম, “আপনি এখানে ?” ভদ্রলোকের মুখ আমিসির মতো শুকাইয়া গেল ! বলিলেন, “আজ্ঞে, আপনাকে তো চিনলাম না ?” হাসিয়া বলিলাম, ‘এখানেই জীবন কাটিয়েছেন নাকি ? মানুষ দেখেননি কখনো ? আমি আপনার মতোই মানুষ । এত জায়গা থাকতে এখানে এসে ভাত রাধছেন কেন তাই জিজ্ঞাসা করছি।”