পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাণিক গ্রন্থাবলী

 ঘণ্টা দুই পরে সাব ইনসপেক্টর রজনী ধর আসিলেন। ভারি অমায়িক লোক। হাসিয়া বলিলেন, না মশাই না, দেশে দেশে আপনাকে আমরা খুঁজে বেড়াই নি, যত বোকা ভাবেন আমাদের, অত বোকা আমরা নই। বি-এ এম এটা আমরাও তো পাশ করি? আপনার বাড়িটাতে শুধু একটু নজর রেখেছিলাম — আমি নই, আমি মশাই থানায় ঘুমোচ্ছিলাম — অন্য লোক। আপনি একদিন আসবেন তা জানতাম,— সবাই আসে, স্ত্রী পরিবারের মায়া, বড় মায়া মশাই। টাকাগুলো আছে নাকি পকেটে? দেখি একবার হাতড়ে।— না থাকে তো নেই, টাকার চেয়ে আপনাকেই আমাদের দরকার বেশি, আপনাকে পাওয়া আর দুশোটি টাকা পাওয়া সমান কিনা।— জানেন না বুঝি? আপনার জন্যে কমলবাবু যে দুশো টাকা পুরস্কার জমা দিয়েছেন।— নইলে এই শীতের রাত্রে বিছানা ছেড়ে উঠে এসেও আপনার সঙ্গে এমন মিষ্টি মিষ্টি কথা কই?

 শ্যামার কান্না, ছেলেমেয়ের কান্না সর্বসমেত পাঁচটি প্রাণীর কান্নার মধ্যে শীতলকে লইয়া সাব-ইনসপেক্টর চলিয়া গেল।

 মামা বলিল — কাঁদিস নে শ্যামা, কাল জামিনে খালাস করে আনব। তারপর চুপি চুপি বলিল, কি মুখ্যু দেখলি? টাকাগুলো পকেটে করে নিয়ে এসেছে! নিজেও গেলি, টাকাও গেল,— গেল তো?



ছয়

 শীতলের জেল হইয়াছে দু বছর।

 শ্যামা একজন ভাল উকিল দিয়াছিল। শীতলের এই প্রথম অপরাধ। টাকাও কমলবাবু প্রায় সব ফিরিয়া পাইয়াছিলেন,— শ্যামা যে হাজার টাকা লুকাইয়া ফেলিয়াছিল আর শীতল যে শ’তিনেক খরচ করিয়াছিল, সেটা ছাড়া। জেল শীতলের ছ মাস হইতে পারিত, এক বছর হওয়াই উচিত ছিল। কিন্তু শীতলের কিনা মাথায় ছিট আছে, বিচারের সময় হাকিমকে সে যেন একদিন কি সব বলিয়াছিল,— যেসব কথা মানুষকে খুশী করে না। তাই শীতলকে হাকিম কারাবাস

১০৪