পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী SOC কেমন দুষ্ট-দুষ্ট মুচকি হাঁসি হাসে, আড়াচোখে কেমন করিয়া সে যেন বিধানের দিকে তাকায়,--সকলের সামনে কী একটা অদ্ভুত কৌশলে সে যেন গোপন একটা ভাবতরঙগ তার আর বিধানের মধ্যে প্রবাহিত করিয়া রাখে। অতিশয় দুর্বোধ্য, সূক্ষ্ম ও গভীর একটা লুকোচুরি খেলা। শ্যামা কিছু বুঝিতে পারে না, তবু ভালোও তাহার লাগে না। একটু সে সতর্ক হইয়া থাকে। শামু বিধানের ঘরে গেলে মাঝে মাঝে নানা ছলে দেখিয়া আসে ওবা কী করিতেছে। কোনোদিন শামুকে বিধান পড়া বলিয়া দেয়, সেদিন শামুর শ্রদ্ধাপূৰ্ণ নিবীহ ভাবটি শ্যামার ভালো লাগে। কোনোদিন বিধান জ্ঞানবিজ্ঞানের কথা বলে, বুঝিতে না পারি যা শামু ফ্যালফ্যাল করিয়া তাকায়, আর থাকিয়া-থাকিয়া টোক গেলে, সেদিনও শ্যামার মন্দ লাগে না। সে অসন্তুষ্ট হয় সেদিন, যেদিন শামু করে দুষ্টামি। দরজার বাহিরে শ্যামা থমকিয়া দাঁডয। চোেখ ঘুরাইয়া মুখভঙ্গি করিয়া শামু কথা বলে, বিধানের মুখের কাছে তর্জনী তুলিযা শাসায়, তাবপর হাসিযা যেন গলিযা পড়ে—দেখিয়া রাগে শ্যামার গা রিরি করিতে থাকে। এ কী নির্লজ ব্যবহার অতবড়ো আইবুড়ো মেয়ের! এত কীসের অন্তরঙগতা ? বিধান ওকে এত প্রশ্রয় দেয কোন ? ঘবে ঢুকিযা শ্যামা বলে, কী হচ্ছে তোদের!! খুব সাবধানে বলে। বিধান না টের পায় সে অসন্তুষ্ট হইয়াছে। শামু পৃ. :- মাসিম, আপনাব ছেলে বাজি হেরে দিচ্ছে না।--দিন তো শাসন করে ? কীসের বাজি বাছা ? --শ্যামা বলে। বললে জিভ দিয়ে আমি নাক ষ্টুতে পারি দু টাকার সন্দেশ খাওয়াবে। নাক ষ্টুলাম, এখন দিচ্ছে না। টাকা । জিভ দিয়া নাক-ছোঁয়া ? এই ছেলেমানুষি ব্যাপাব লইযা ওদের হাসােহাসি ? ছি, কী সব ভাবিতেছিল সে । তার সোনার টুকরো ছেলে, তাব সম্বন্ধে ও কথা মনে আনাও উচিত হয় নাই। শ্যামা অপ্রতিভ হইয়া যায। বিভা আসিলে বসে না, দাঁড়াইযা দুচাবটি কথা বলিয়া চলিয়া যায়। আঁচল-লুটানো শিথিল-কবরী বিলাসী বাবু মেযে সে, উদাসী আনমনা তীব ভাব, এ বাড়ির সকলোিম কত গভীর অপরাধ সে যেন ক্ষমা কবিয়াছে এমনি উদ্যাব ও নম্র তাহার গর্ব। রাজবানি যেন শখ করিয়া, দরিদ্র প্রজার গৃহে আসিয়াছে, স্মিত একটু হাসি, ছেড লেপতোশক ভাঙা বাকসো-প্যাটরা ময়লা জামা-কাপড় দেখিয়াও নাক-না সিঁটকানোর মহৎ উদাবতা, এই সব উপহাব দিয়া সে চলিয়া যায়। বসিতে বলিলে বলে, এই যে বসি, বসার জন্য কী, বসেই তো আছি সারাদিন! এদিক-ওদিক তাকায় বিভা, শ্যামার হাঁড়ি-কলসি, লোহার চায়েব কাপ, ছেঁড়া চটেব আসন, গোবব-লেপা ন্যাতা সব লক্ষ করে,-কিন্তু না, বিভার স্বপনলাগা চোখে সমালোচনা নাই। কৃত্রিম না-থাকা নয, সত্যই নাই। শ্যামা গামছা পরিয়া গা ধোয় বলিয়া বিভা তাকে অসভ্য মনে করে না, হাসে না মনে মনে। সে শুধু দুঃখ পায। তার দয়া হয়। খাটি সমবেদনার সঙ্গেই সে মনে করে যে, আহা, একটু শিক্ষাদীক্ষা পাইলে এমনটা হইত না সকলের সামনে গামছা পরিতে শ্যামা লজ্ঞা পাইত । হাসি যদি কখনও পায় বিভার, সে বিধানের জন্য। হঠাৎ ঘর হইতে বাহির হইয়া বিভাকে দেখিলে আবার সে ঘরে ঢুকিয়া যায়, বিভা যেন অসুৰ্যাম্পশা অন্তঃপুরচারিণী, নীচের বাড়িওয়ালার মেয়ে-বউ-এর মতো লজ্জাশীলা। বিধান নিজে লজা পাইয়া সরিয়া গেলে কথা ছিল না, বিভার লজ্জা বাঁচানোর জন্য ভদ্রতা করিয়া সে সরিয়া যায় বলিয়াই বিভার হাসি পায়। আপনার বড়ো ছেলে বুঝি? —সে জিজ্ঞাসা করে। শ্যামা বলে, হঁহা ।