পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in > brや মানিক রচনাসমগ্ৰ অনন্ত একটু ভাবিয়া বলিল, চলো, মা কালীকে দর্শন করে আসি। কেতকী সািভয়ে বলিল, না। •ा (<न्म ? কেতকীর মুখ পাংশু হইয়া গিয়াছিল, টোক গিলিয়া সে বলিল, ভয় পাবে। মা কালী বলে চেনা যায় না,—মনে হয় খাড়া হাতে জমাট-বাঁধা অন্ধকার। দু চোখ হিরার মতো জ্বলজ্বল করছে। দিনের বেলাও মন্দিরে ভালো করে আলো যায় না, প্ৰদীপ জেলে দেখতে হয। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিমার দুচোখে দুটাে প্ৰদীপ দপ করে জ্বলে ওঠে। প্রথম দিন একা গিয়ে ওই দেখে আমি অজ্ঞান হযে পড়েছিলাম। কেতকী একবার শিহরিয়া উঠিল। এবং তাঁহাতেই তাহার শরীর ও মনের বর্তমান অবস্থা অনন্তর কাছে সম্পূর্ণ বৃপে পরিষ্কার হইয়া গেল। কিন্তু সে কিছুই বলিল না। কেতকীর আত্মসংবরণের প্রক্রিয়াটা নীরবে চাহিয়া দেখিতে লাগিল। চলো, ঘরে যাই—কেতকী বলিল। চলো। চিঠিতে তুমি আমায় কোনো খবরই দাওনি কেতকী! পদে পদে অপ্রস্তুত হচ্ছি। এ সব কী চিঠিতে জানানোর মতো খবর? না, তা নয়।--অনন্ত স্তব্ধ হইয়া গেল। এ সব মানে যে সব খবর অতি সামান্যই সে জানাইয়াছে। সেটুকুও চিঠিতে লেখা কেতকীর পক্ষে সতাই অসম্ভব। এ বাড়ির ছবি কি চিঠিতে ওঠে ! কেতকীব এই শীর্ণ পাণ্ডুর মুখচ্ছবির বর্ণনা কেতকীব ভাষাতে নাই-চিঠির ভাষাতে তো একেবারেই নাই। দেউড়ির নীচে আসিয়া কেতকী হাসিয়া বলিল, আমন করে ওপর দিকে তাকাচ্ছ যে ? আমি যখন সঙ্গে আছি ভয় নেই। তুমি সঙ্গে থাকলে বুঝি মাথায় ইট ভেঙে পড়তে পারে না ? কই, আর পারে? তিনবছর এর তলা দিয়ে যাতায়াত করছি, চুনবালিও তো কোনোদিন মাথায় খসে পড়েনি। জানো, এ বাড়ির বিপদ আমায় এড়িয়ে চলে। অনন্ত থমকিয়া দাড়াইয়া পড়িল । তবে এইখানে দাঁড়িয়ে তোমায় একটা কথা জিজ্ঞাসা করি কেতকী। এ ভাঙা দেউলে এসে নীড় বাঁধার দরকার হল কেন তোমাদের ? সাতপুরুষের ভাঙা দেউল ছাড়া মানুষ আর কোথায় শান্তি পাবে বল? অনন্ত বিচলিতভাবে বলিল, এমন ভয়ানক শান্তির দরকার পড়ল কার ? তোমার না। শঙ্করের ? ওঁর। স্বামীর শান্তিতেই স্ত্রীর শান্তি। এ কথার সত্যমিথ্যা ভগবান জানেন, অনন্ত নীরবে চলিতে আরম্ভ করিল। ইটের স্তুপ বেড়িয়া অাঁকাবঁকা সরু পথ ঘর পর্যন্ত পেঁছিয়াছে-শঙ্কর ও কেতকীর পায়ে পায়েই পথটি গড়িয়া উঠিয়াছে বোধ হয় । অনন্ত ভাবিতে লাগিল, শঙ্করের জীবনে যে শান্তির অভাব ঘটিয়াছিল সে তো তাহা টের পায় নাই ? শহরের বাস তুলিয়া দিয়া জমিদারিতে গিয়া বাস করিবে অকস্মাৎ সে সময় শঙ্কর এই সিদ্ধান্ত করিয়া বসিযাছিল, তার কিছুকাল পূর্ব হইতেই তাহার মধ্যে অনেক আশ্চর্য পরিবর্তন দেখা দিয়াছিল সত্য, কিন্তু তার কারণ যে অশান্তি এরূপ অনুমানের কোনো সংগত কারণই ছিল না। যে গাম্ভীর্য তাহারা আসিয়াছিল। তাহা ছিল প্রশান্ত, জীবনের সর্বপ্রকার অগভীর আনন্দ উৎসবে যে ক্রমবর্ধমান বিমুখতা দেখা দিয়াছিল। তাহা ছিল প্রশান্ত। মনে হইয়াছিল, সে ভাবিতে শিখিয়াছে। প্রত্যেক মানুষের যে একটি করিয়া নিজস্ব অন্তর্জগৎ আছে ধীরে ধীরে তাহার সন্ধান পাইতেছে। অনেকের জীবনেই এ রকম ঘটে। শুধু বঁচিয়া থাকার মধ্যেই এমন কতকগুলি চিরন্তন রহস্য আছে। সচরাচর যাহার