পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in SCO মানিক রচনাসমগ্ৰ সুপ্রিয়া দু পা সামনে এগিয়ে যায়। হেরম্বের একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে, ছেলেমানুষের মতো কথা আমি বলিনি। আপনিই আমায় ছেলেমানুষ করে রাখছেন।-এ সব চলবে না, তাকান, তাকান, তাকান আমার দিকে। আমার ছ। বছর বিয়ে হয়েছে, আমি কাঁচখুকি নই যে, হঠাৎ কেন এত রেগে গেলেন শুনতে পাব না। হেরম্ব তার চোখের দিকে তাকাল না। তেমনি ভাবে বসে তেমনি কড়া সুরে বলে, শূনে কী হবে? তুই কী বুঝবি? তোর মাথাটা একেবারে খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু তুই এমন আস্তে আস্তে নিজের সর্বনাশের ব্যবস্থা করছিস কেন ? আমি তোকে ভালো উপায় বলে দিচ্ছি। রাত্রে একদিন অশোককে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘরের চালে আগুন লাগিয়ে দিস।। অনেকক্ষণ স্তব্ধ বিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে কথা বলার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সুপ্রিয়া কেঁদে ফেলে রান্নাঘরে চলে গেল। তার মনে হতে লাগল, বিশেষভাবে তাকে আঘাত করবার জন্যই হেরম্ব এতকাল পরে তার বাড়িতে অতিথি হয়েছে। দুদিনের নোটিশ দিয়ে ওর আকস্মিক আবির্ভাবটা গভীর ষড়যন্ত্রের ব্যাপার। পাঁচ বছরে তার মনের অবস্থা কী রকম দাঁডিয়েছে, আগে তার একটা ধারণা করে নিয়ে তাকে আঘাত দিয়ে অপমান করে তার কল্পনা ও স্বপ্নের অবশিষ্টটুকু মুছে নেবার উদ্দেশ্যেই হেরম্ব তার বাড়িতে পদার্পণ করেছে। তাকে ও শাসন করবে, সংকীর্ণ ও সংক্ষিপ্ত একটি বাগানে তার মূল বিস্তার করা দবকার বলে তার সব বাতুল্য ডালপালা ছেটে ফেলবে, এমন একটি শাখা রেখে যাবে না, যেখানে সে দুটি অনাবশ্যক ফুল ফোটাতে পারে। ছোটো দারোগার সঙ্গে হেরম্ব তার বিয়ে দিয়েছিল। আজ একদিনে সে তাকে ছোটো দারোগারই বউ তৈরি করে দিয়ে চলে যাবে। এবার আর কাজে সুপ্রিয়া সহজে মন বসাতে পারে না, মাছের ঝোলে আলুর দামের গোটা গোটা আলু ছেড়ে খুন্তি দিয়ে তরকারির মতো ঘুটে দেয়। নুন দেওয়া হয়েছে। কিনা মনে করতে না পেরে খুন্তিটা উঁচু করে ঠান্ড হবার সময় না দিয়েই একফোটা তপ্ত ঝোল জিভে ফেলে দেয়। গরমের জ্বালাটাই সে টের পায়, নুনের স্বাদ পায় না। ডেকে বলে, ও পড়ে, দ্যাখ তো নিমক দিয়া কী নেই? এবং মাছের ঝোল মুখে করা দূরে থাক, পাড়ে তার ছোঁয পর্যন্ত খায় না। স্মরণ করে তার রাগ হয়। যাও, তুমি বাহার চলা যাও। ভাবে, হয়েছে। আজ আর আমি বেঁধে খাইয়েছিা! তার মনের মধ্যে হেরম্বের কথাটা পাক খেয়ে বেড়ায়। শরীর খারাপ বলে অশোক ওষুধের মতো মদ খেলে তার অপরাধটা কোনখানে হয় সে ভেবে পায় না। আজকের ওষুধ কাল অশোকের নেশায় দাঁড়িয়ে গেলেও সে ঠেকাবে কী করে ? বারণ সে করতে পারে। একবার কেন দশবার বারণ করতে পারে। দরকার হলে পায়ে ধরে কঁদোকাটা করতেও তার আপত্তি নেই। কিন্তু চাকরির জোরে বিয়ে-করা বউয়ের কথা শুনছে। কে? সংসারে সকলে যদি তার কথামতেই চলত। তবে আর ভাবনা ছিল কীসের! মদে আসক্তি জন্মে যাবার আশঙ্কা অশোক হেসেই উড়িয়ে দেবে। বলবে, খেপেছ? আমার ওটুকু মনের জোর নেই? এ বোতল দুটাে শেষ হলে হয়তো আর কিনবার দরকার হবে না। বলবে, কতগুলো টাকা থাকলে পোস্টাপিসে জমত। সাধ করে কেউ অত দামি পদার্থ কেনে! সে জবাব দেবে কি ? স্বামীর মনের জোরে সন্দেহ প্রকাশ করবে? তার স্বাস্থ্য ভালো করার দরকার নেই বলে আবদার ধরবে ? অশোক ধমকে উঠলে তার মুখখানা হেরম্ব যেন তখন দেখে