পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in দিবারাত্রির কাব্য WOSS অনেক দূর গিযে সুপ্রিধা। জিজ্ঞাসা কল, চিঠিতে ওই মেয়েটার কথা লেখেননি কেন ? লিখিনি ? ভুল হয়ে গিয়েছিল। আমি খবর পেয়েছিলাম। ও সাক্ষী দিতে একবার পুরী এসেছিল। গিয়ে বলল, আপনি এক তান্ত্রিকের আড্ডায় ডুবতে বসেছেন। তান্ত্রিক নয়, বৈয3ব। মেয়েটাকে দেখেই আমার ভালো লাগেনি। ওর মা-টা আরও খারাপ। হেরম্ব গভীর হয়ে বলল, তুই বুঝি বুলে গেছিস, সুপ্রিয়া, কতকগুলি কথা আছে মুখ ফুটে যা বলতে নেই ? সুপ্রিয৷ কলহের সুবে বলল, চুপ করে থাকিব, না? আমি তা পারব না। আমি মেয়েমানুষ, অত উদ্যাব আমি হতে চাই না। পারলে ওই রাক্ষসীকে আমি বিষ খাইয়ে গল টিপে মেরে ফেলব, এই আপনাকে আমি স্পষ্ট বলে বাখলাম । হেব্বস্ব অনাথের মতো অনুত্তেজিত কণ্ঠে বলল, তুই যে ক্ৰমেই মালতী বাউদি হয়ে উঠছিস, সুপ্রিয়া । মালতী বাউদি কে ? ওই মা-টা বুঝি ? কুঁ, ডাকের দেখি বাহার আছে ? চেহাবাব বাহাব আছে, সুপ্রিয়া। তা আছে, দুজনাবাই । খোচা পেযে হেরম্ব একটু বিরক্ত হল। সুপ্রিয়ার এবারকার পদ্ধতিটা ভালো নয়। বুপাইকুড়ায় সে তাদেব বাহা সম্পর্ককে প্রাণপণে ঠেলে তুলতে চেয়েছিল সেই স্তরে যেখানে বাস্তবধর্মী মানুষের আবেগ ও স্বপ্ন বিছানো থাকে, যেখানে বাস ও মাধুর্যোব সমাবেশ ; সাধারণ যুক্তি ও বিচারবুদ্ধিকে তুচ্ছ কবে দেবার প্রবৃত্তি হোিবশ্ব যাতে দমন করতে না চার্য, বুপাইকুড়ায় তাই ছিল সুপ্রিয়ার প্রাণপণ চেষ্টা। এবার সুপ্রিয়া তার সমস্ত নেশা টুটিয়ে দিতে চায়, সে যে প্রায় ভুলে যেতে বসেছে সে রক্তমাংসের মানুষ, তার এই ভ্ৰান্তিকে সে টিকতে দেবে না। আত্মবিস্মৃত পাখির মতো নিঃসীম আকাশে পাখা মেলে অনন্ত-যাত্রায় তাকে প্রস্তুত হতে দেখে এই নীড়িলুব্ধ বিহঙ্গামী তব কাছে পৃথিবীর আকর্ষণ টেনে এনেছে, তাকে মনে পডিযে দিচ্ছে আকাশে আশ্ৰয নেই, খাদ্য নেই, পানী যি নেই। হেরম্ব ধীবে ধাবে হাঁটে। সুপ্রিযাব ইঙ্গিত মিথ্যা নয়, বুপের বাহার ছাড়া আনন্দের আর কিছুই নেই। আনন্দের ভিতর ও বাহিব সুন্দর, অপার্থিব সৌন্দর্যে তার দেহ-মন মণ্ডিত হয়ে আছে ; সে রঙিন কালিতে ছাপানো অনবদ্য কবিতার মতো। অথবা সে আকাশের মতো, তার মধ্যে ডুবে গিয়েও পাখিকে নিজের পাখায় ভর করে থাকতে হয়, পাখা অবশ হলে পৃথিবীতে পতন অনিবার্য। আনন্দকে প্রেম ছাড়া আর কোনো পূজায় পাওযা যায় না, প্রেমের শেষ অবশ্য নিশ্বাসের সঙেগা সে হারিয়ে যাবে। সুপ্রিয়ার কাছে অভ্যস্ত বিবক্তি ও মমতার অবাধ খেলায় বিস্ময়কর স্বস্তিবোধ করে হেরম্ব কি এখন বুঝতে পারছে। না আনন্দের সান্নিধ্য তাকে অনির্বচনীয় সুতীব্র সুখের সঙ্গে কী অসহ্য যন্ত্রণা দেয় ? তার অর্ধেক বৃদয ভালোবাসার যে পুলক সংগ্রহ করে, অপরাধ মরণাধিক কষ্ট সয়ে তার মূল্য দেয়। সুপ্রিয়ার কাছে সে উন্মাদনা পাবার সম্ভাবনা যেমন নেই, সে রকম অসহ্য দুঃখও সে দেয় না। তবু সেই দুঃখই তার চাই, তাকে পরিহার করা যাবে না। চল ফিরি। চলুন আর একটু। নির্জনতা গভীর হয়ে আসছে। জলে ভিজে অশোকেৰ কিছু হয়নি তো? হঠাৎ অশোকের কথা ওঠায় সুপ্রিয়া একটু বিস্মিত হয়ে হেরম্বের মুখের দিকে তাকাল।