পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang laboOokS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8ᏙebᏄ একে একে এই হোটেলেই সাত দিন কাটিযা গেল। এর মধ্যে মতিকে কুমুদ একদিন দেখাইল সিনেমা আর একদিন লইয়া গেল গঙ্গাতীরে বেড়াইতে। কত কী সে বলিয়াছিল। ঘুরিয়া ঘুরিয়া শহর দেখাইবে, আজ সিনেমা কাল থিয়েটার করিয়া বেড়াইবে, গৃহকোণে মুখোমুখি বসিযা থাকিবে কপোতকপোতীর মতো। সে সব সংকল্প কোথায় গেল কুমুদের ? তার অপরিমেয় আলস্যপ্রিয়তায় মতি অবাক হইয়া থাকে। কোথাও লইয়া যাওয়া দূবে থাক, মাতিব সঙ্গে খেলা করিতেও তাব যেন পরিশ্রম হয়, আমন কোমল হালকা দেহ মতির তবু কুমুদের বুকে তার কতটুকু ক্ষণস্থায়ী আশ্রয়! শূইয়া বসিয়া হাই তুলিয়া বই পড়ে কুমুদ, আলস্যের মধুর আরামে দিনে এক টিন সিগাবেটি খায়, বা করিয়া মতিকে খানিক আদর কবি যা জানােলা দিয়া পুরা দশ মিনিট চাহিত্যা থাকে বাহিরে, অন্যমনে শিস দেয়। বলে, চা করো মতি । মতি বলে, কোথাও নিয়ে যাবে না। আমাকে আজ ? কুমুদ বলে, কোথায় যাবে? কী আব্ব দেখবার আছে কলকাতায? একদিন থিয়েটাব দেখে, বাস, তাতেই অরুচি। তাব।পর চলো না একদিন বেরিযে পড়ি, পুরী ওযালটেয়াব সব বেড়িযে আসি! এখানে ভদ্রলোকে থাকে ? কলকাতা কী শহর, এ তো একটা বাজার! বাস্তায় বেরুলে মাথা ঘোরে। কবে যাব পুরী টুরির দিকে ? যা ; যা-. <ব, স্তী কী — কুমুদ হাসে, আঁচল ধবিয়া বিব্রত মতিকে কাছে টানিযা বলে, একটা ঘরে শুধু আমরা দুজনে কেমন আছি! ভালো লাগে না মতি ? ই, লাগে। তাব।পর ভয়ে ভয়ে - যা বই পড় সারাদিন। তুমিও পড়বে মতি, তুমিও পড়বে। বাস, তারপর এক পেয়ালা চা খাইয়া কুমুদ আবার চিত! আবেগ মূৰ্ছনার একটা সম্পূর্ণতা মতির কখনও পাইবার উপায় নাই! খানিক অন্যমনস্ক চিন্তা, এক পরিচ্ছেদ বই, দশ মিনিট মতি-এ যেন পালা কিবা খেলা কুমুদেব, বৈচিত্রা সৃষ্টি ! ভালোবাসার এত ক্ৰমশ মতির ভালো লাগে না। তবে ছোটােবড়ো সেবার সুযোগ মতিকে কুমুদ অফুরন্তই দিযাছে, মতি চা করে, খাবার দেয়, তৃষ্ণার জল জোগায়। দাডি কামানোর আয়োজন করে, ক্ষুর ধুইয়া সরঞ্জাম গুছাইয়া রাখে, কুমুদের টেরিও মতিই কাটে, দিয়াশলাই সিগারেট প্রভৃতি জোগান দেয়। আরও কত কী মতি করে। একদিন কুমুদ বলিয়াছিল, পা টাি বড়ো কামড়াচ্ছে বউ। কেন ? এমনি কামড়াচ্ছে। কেউ যদি একটু টিপে দিত! মতি আবক্ত মুখে বলিয়াছিল, চাকরকে ডেকে বল না ? হােটেলের চাকর পা টিপবে? তবেই হয়েছে! দাও না, তুমিই একটু দাও না আস্তে আস্তে ? সেই হইতে দুপুরবেলা কুমুদের ঘুম পাইলে মতি তার পাও টিপিয়া দেয়। শহরের শব্দে তখন স্থানীয় একটু স্তব্ধতার চাপ পড়ে। এ সময়টা মতির মন ভারী খারাপ হইয়া যায়। কলের মতো এক হাতে কুমুদের পা টিপিতে টিপিতে অন্য হাতে তাঁহাকে চােখ মুছিয়া ফেলিতে হয়। নিজেকে কেমন বন্দিনী মনে হয় মতির। মনে হয়, কুমুদ তাকে চিরকাল এই ছোটাে ঘরটিতে পা-টেপানোর জনা আটকাইয়া রাখিবে, তার খেলার সাথি কেহ থাকিবে না, আপনার কেহ থাকিবে না, মাঠ ও আকাশ আর জীবনে পড়িবে না চােখে, বালি মাটির নরম গেয়ে পথে আর সে পরিবে না হাঁটিতে। সাত দিন! মোটে সাত দিন সে এখানে কাটিয়াছে মতি ?