পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8Գ Տ) পা দিয়া ছোটাে একটি আগাছা নাড়িয়া দিতে ঝরঝর করিয়া শিশির ঝরিয়া পড়িল। শশীর মনে হইল কুসুমকে ধরিয়া এমনই কঁকুনি দেয় যাতে তার চোখের আটকানো জলের ফোঁটাগুলি এমনিভাবে ঝরিয়া পড়ে এবং দুটােখ মেলিয়া সে তা দেখিতে পায়। কুসুম জিজ্ঞাসা করিল, কথা বলবেন বলে ডেকে এনে চুপচাপ কেন ছোটােবাবু? কুসুম অনায়াসে বলিল, পরশু যাব। আমায় যে বলনি কিছু? কখন বলব ? আপনি কি আসেন ? শশী রাগিয়া বলিল, নাইবা এলাম ? জান না কাজের ভিড়ে কত ব্যস্ত থাকি? মিথো করে ভাঙা হাত দেখাতে বৃষ্টি মাথায্য করে যেতে পাের, এত বড়ো একটা খবর দেবার জন্যে একবার যেতে ध्°८ का ? এ কথায্য ক্ৰোধের কী অপূর্ব ভঙিগই কুসুম করিল! দুহাতে মুখের দুপাশের আলগা চুলগুলি পিছনে ঠেলিয়া দিয়া এমন তীব্ৰদূষ্টিতে শশীব দিকে চাহিল যে মনে হইল শশী যেন দুরন্ত অবাধ্য শিশু, এখুনি কুসুম তাকে একটা চড়াচাপড় মারিয়া বসিবে। এমন তো ছিল না। কুসুম! শশী কবে তাকে অপমান না করিয়াছে, কবে মান রাখিয়াছে তার অভিমানের, কবে এমন কথা বলিতে ছাড়িয়াছে যা শনিলে গা জ্বলিয়া যায না ? কোনোদিন বাগ সে করে নাই, ভৰ্ত্তিসিনার চোখে চাহে নাই। আজ এই সামান্য অপমানে সে একেবাবে ফুসিয়া উঠিল বাঘিনির মতো! তবে কড়া কথা কিছু সে বলিল না, আত্মসংবরণ করিল। তার রাগের ভঙ্গি দেখিয়াই শশী একেবারে নিভিয়া গিয়াছে দেখিয়া, কে জানে কী আশ্চর্য কৌশলে, কথা বলার চিরন্তন রহস্যময় সুরটিও কুসুম ফিরাইযা আনিল। বলিল, বাবা, কী ছেলেমানুষের পাল্লাতেই পড়েছি! মিথ্যে করে ভাঙা হাত দেখাতে একবাব ছেড়ে একশো বার যেতে পারি ঝড় বৃষ্টি ভূমিকম্প মাথায় করে, ও কথা বলবার জন্য যাব কেন ? শশী বলিল, পর্যানকে দিয়ে তো বলে পাঠাতে পারতে ? কুসুম বলিল, তাই বা কেন পাঠাব? যে খবর নেয় না। তাকে খবর দেবার কী গরজ আমার ? আমিই তো বারণ করলাম। ওকে। কাজের ভিডে আসতে পারিনি বলে আমি একেবাবে পাব হয়ে গেছি, না বউ ? পাগলাটে মানুষ আমি, তবু যাওয়ার দুদিন আগে আমাকে এখানে ডেকে আনা চাই, আজেবাজে কথা বলে কান ঝালাপালা করা চাই! দশ বছর খেলা করেও কি সাধ মেটেনি ? আমরা মুখু্য গেয়ে মেযে এ সব খেলার মর্ম বুঝি না, কষ্টে মরে যাই। এ কথার কোনো প্রতিবাদ নাই বলিয়া শশীর মুখে কথা ফোটে না। জুতার ভিতর হইতে পা বাহির করিয়া পায়ে ঘাসের শিশির মাখিতে মাখিতে নতমুখে সে মুকি হইয়া বসিয়া থাকে। এদিকে কুসুমের চোখে এতক্ষণে জল আসিয়া পড়িয়াছে। শশীর কাছে মনের আবেগকে এমন স্পষ্টভাবে চােখের জলে কুসুম কোনোদিন স্বীকার করে নাই। তবে সে বড়ো শক্ত মেয়ে, দুবার জোরে জোরে শ্বাস টানিয়া আর দুবার আঁচলে চোখ মুছিয়াই আবেগ সে আয়ত্তে আনিয়া ফেলিল। বলিল, এমন হবে ভাবিনি ছোটােবাবু। তাহলে কোনকালে গা ছেড়ে চলে যেতম। কুসুম আর কিছুক্ষণ চােখের জল ফেলিলে শশী যে হঠাৎ খ্যাপার মতো বিনা বাক্যব্যয়ে তাকে দুহাতে জড়াইয়া ধরিত তাতে সন্দেহ ছিল না, কিন্তু কুসুমের এই অনুযোগগুলি তাকে দমাইয়া রাখিল। এ কথা সে ভুলিতে পারিল না যে এতকাল পরে ও ভাবে কুসুমের সমস্ত নালিশের জবাব