৫
বৃহত্তর—মহত্তর
তবে এলে কেন?
না এসে চলল না তাই।
তার মানেই তুমি হার মেনেচ। নগেনবাবুর সঙ্গে যে বাজি রেখেছিলে তাতে তোমার হার হয়েচে।
কিসের বাজি?
মনে নেই? একদিন বলেছিলে সে নিছক স্বামী; বিধাতা নয়। চোখ বোজার আগে তোমায় বাড়িছাড়া করার সাধ্য তার নেই, নেই, নেই।
নেই ত! আমায় কেউ বাড়িছাড়া করে নি, আমি নিজে এসেচি। শুধু স্বামীকে সইতে না পেরে চলে আসব আমি কি তেমন মেয়ে? নই, নই, নই। এগার বছর ধরে তার অবিচার অত্যাচার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল———সে জন্য নালিশ করতেও আমি ভুলে গিয়েছিলাম। তা ছাড়া স্বামী কি সারাদিন অত্যাচার করে? চব্বিশ ঘণ্টায় দিন, ক’ঘণ্টা মানুষের নিষ্ঠুরতায় ধৈর্য থাকে? যদি কোন বই-এ প’ড়ে থাক অত্যাচারী স্বামীর কথা, জানবে লেখক শুধু চব্বিশ ঘণ্টার গোটা একটা দিনের আধ ঘণ্টার হিসাব দিয়েচে, বাকী সময়টা চালাকি করে রেখে দিয়েচে নেপথ্যে! অবশ্য ঐ বাকী সময়টা স্নেহ-ভালবাসায় বোঝাই না হয়ে একদম ফাঁকা হতে পারে———কিন্তু ওসব ফাঁক সংসারী মেয়েমানুষের সয়। শুধু স্বামী যার অবলম্বন, সপ্তাহে একটিও মিষ্টি কথা না শুনলে তার অসহ্য ঠেকতে পারে, আমার ত একমাত্র স্বামীই ছিল না জীবনে অবলম্বন! শুধু স্বামীর হিসাবে অভাগিনী হলে অভাগিনী হয়েই আমি থাকতাম ভাই। তার হীনতা যদি শুধু আমার প্রতি অন্যায় করে নিরস্ত থাকত, যদি আমার বর্তমান জীবন এবং ভবিষ্যতে যে-জীবন পৃথিবীতে রেখে যাব সমস্ত গ্রাস না করত, আমি মুখ বুজে তার সংসার ঘাড়ে করে মারতাম। সুখশান্তির অভাব আমায় কাতর করত না, অনাহার, অনিদ্রা, প্রহার, নির্যাতন, উপেক্ষা কিছুই মুছে নিতে পারত না মুখের হাসি! জীবনের আংশিক সফলতা পেলেই আমি তুষ্ট থাকতাম। কিন্তু তা হল না। কতক স্বামীর জন্যে কতক পারিপার্শ্বিক অবস্থার অভিশাপে সমগ্রভাবে আমি ব্যর্থ হয়ে গেলাম———সম্পূর্ণভাবে আমার জীবন হল অকারণ অর্থহীন। স্বামী নয়, দুঃখ দুৰ্দশা নয়———ব্যর্থ বেঁচে থাকাটা আমার সইল না। আমার আত্মা আর্তনাদ আরম্ভ করে দিল।
সতীনের ভয়ে?———ব’লে আমি খোচা দিলাম।