পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

সমাজের মধ্যে তা কদর্য বর্বরতা। প্রাণ না থাকলে দেহ যেমন অপবিত্র, ভাব না থাকলে বাহ্যানুষ্ঠানও তদ্রূপ। সম্প্রতি আমাদের সমাজে তার অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। একটা উল্লেখ করি।

 আজকাল কী একটা হাওয়া পড়বামাত্রই-যে সহসা চতুর্দিকে সন্ধা টিকি ও মোটা ফোঁটার প্রাদুর্ভাব হয়েছে তাতে আমার বেশি কিছু বলবার নেই। দেখেছি বটে, যাদের বহুকালের বনেদি টিকি তাদের শিখা বিনীত হ্রস্বতা অবলম্বন করে মস্তকের পশ্চাতে অনেকটা আত্মগোপন করে থাকে, কিন্তু বর্তমান কালের হঠাৎ টিকিগুলি দেখতে দেখতে অসম্ভব বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে পরম স্পর্ধাভরে দোদুল্যমান হতে থাকে। আশঙ্কা আছে, আবার কোন্‌দিন এইসকল চিন্তাশীল মস্তকের পশ্চাদ্দেশে সহসা টিকির মড়ক উপস্থিত হবে, তখন এই দম্ভদোলকগুলির চিহ্নমাত্র দেখা যাবে না।

 কিন্তু কেবলমাত্র একগুচ্ছ কেশসমষ্টির উপর এত কথা সয় না, এবং তার পক্ষে বা বিরুদ্ধে কোনো রকম নিগূঢ় ব্যাখ্যাও আমার মনে উদয় হয় নি।

 আমার বক্তব্য কেবল এই যে, এই নবাঙ্কুরিত টিকির সঙ্গে সঙ্গে যে-একটা মনের ভাব পরিপুষ্টি প্রাপ্ত হচ্ছে সেটা বর্তমানের প্রকৃতির সঙ্গে সুসংগত নয়। একে ছোঁব না, ওর সঙ্গে খাব না, অমুক ম্লেচ্ছ —তপোরনের বাহিরে এমন করে কাজ চলে না।

 তোমার আমার মতো লোক যারা তপস্যাও করি নে, হবিষ্যও খাই নে, জুতোমোজা প’রে ট্রামে চ’ড়ে পান চিবতে চিবতে নিয়মিত আপিসে ইস্কুলে যাই, যাদের আদ্যোপান্ত তন্ন তন্ন করে দেখে কিছুতেই প্রতীতি হয় না এরা দ্বিতীয় যাজ্ঞবল্ক্য বশিষ্ঠ গৌতম জরৎকারু বৈশম্পায়ন কিম্বা ভগবান কৃষ্ণদ্বৈপায়ন—ছাত্রবৃন্দ, যাদের বালখিল্য তপস্বী ব’লে এ পর্যন্ত কারও ভ্রম হয় নি—একদিন

১৬