পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 পালের নৌকায় হঠাৎ পাল ফেটে গেলে তার যে-দশা মধুসূদনের তাই হল। তখন আর দেরি করবার লেশমাত্র অবকাশ ছিল না। আপিসে চলে গেল। কিন্তু সকল কাজের ভিতরে ভিতরে তার অসম্পূর্ণ ভাঙা চিন্তার তীক্ষ্ণ ধারগুলাে কেবলই যেন ঠেলে ঠেলে বিঁধে বিঁধে উঠছে। এই মানসিক ভূমিকম্পের মধ্যে মনােযােগ দিয়ে কাজ করা সেদিন তার পক্ষে একেবারে অসম্ভব। আপিসে জানিয়ে দিলে, উৎকট মাথা ধরেছে, কার্যশেষের অনেক আগেই বাড়ি ফিরে এল।

৩৫

 এদিকে নবীন ও মােতির মা বুঝেছে, এবারে ভিত গেল ভেঙে, পালিয়ে বাঁচবার আশ্রয় তাদের আর কোথাও রইল না। মােতির মা বললে, “এখানে যে-রকম খেটে খাচ্ছি সে-রকম খেটে খাবার জায়গা সংসারে আমার মিলবে। আমার দুঃখ এই যে, আমি গেলে এ-বাড়িতে দিদিকে দেখবার লােক আর কেউ থাকবে না।”

 নবীন বললে, “দেখাে মেজোবৌ, এ-সংসারে অনেক লাঞ্ছনা পেয়েছি, এ-বাড়ির অন্নজলে অনেকবার আমার অরুচি হয়েছে। কিন্তু এইবার অসহ্য হচ্ছে যে, এমন বউ ঘরে পেয়েও কি করে তাকে নিতে হয়, রাখতে হয়, তা দাদা বুঝলে না— সমস্ত নষ্ট করে দিলে। ভালাে জিনিসের ভাঙা টুকরো দিয়েই অলক্ষ্মী বাসা বাঁধে।”

 মােতির মা বললে, “সে-কথা তােমার দাদার বুঝতে দেরি হবে না। কিন্তু তখন ভাঙা আর জোড়া লাগবে না।”

 নবীন বললে, “লক্ষ্মণ দেওর হবার ভাগ্য আমার ঘটল না, এইটেই আমার মনে বাজছে। যা হােক, তুমি জিনিসপত্তর এখনই গুছিয়ে ফেলো, এ-বাড়িতে যখন সময় আসে তখন আর তর সয় না।”

১৩৫