পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 “তুমি যেটা হুকুম করবে সেইটেই পরব।”

 “আমি তাে মনে করি তিনটেই তিন আঙুলে মানাবে।”

 “হুকুম কর তিনটেই পরব।”

 “আমি পরিয়ে দিই।”

 “দাও পরিয়ে।”

 মধুসূদন পরিয়ে দিলে। কুমু বললে, “আর কিছু হুকুম আছে?”

 “বড়ােবউ রাগ করছ কেন?”

 “আমি একটুও রাগ করছি নে।” বলে কুমু আবার ঘর থেকে চলে গেল।

 মধুসুদন অস্থির হয়ে বলে উঠল, “আহা, যাও কোথায়? শােনো, শােনো।”

 কুম তখনই ফিরে এসে বললে, “কী বলো।”

 ভেবে পেলে না কী বলবে। মধুসূদনের মুখ লাল হয়ে উঠল।

 ধিক্‌কার দিয়ে বলে উঠল, “আচ্ছা, যাও।” রেগে বললে, “দাও আংটিগুলাে ফিরিয়ে দাও।”

 তখনই কুমু তিনটে আংটি খুলে টিপায়ের উপর রাখলে।

 মধুসূদন ধমক দিয়ে বললে, “যাও চলে।”

 কুমু তখনই চলে গেল।

 এইবার মধুসূদন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলে যে, সে আপিসে যাবেই। তখন কাজের সময় প্রায় উত্তীর্ণ। ইংরেজ কর্মচারীরা সকলেই চলে গেছে টেনিস খেলায়। উচ্চতন বড়ােবাবুদের দল উঠি-উঠি করছে। এমন সময় মধুসূদন আপিসে উপস্থিত হয়ে একেবারে খুব কষে কাজে লেগে গেল। ছটা বাজল, সাতটা বাজল, আটটা বাজে, তখন খাতাপত্র বন্ধ করে উঠে পড়ল।

১৪৪