পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 কুমু বিপ্রদাসের হাত ধরে বললে, “দাদা, একটা কথা বলি, রাগ করবে না বলো।”

 “রাগ করবার মতাে কথা হলে রাগ না করে বাঁচব কী করে?”

 “না দাদা, ঠাট্টা নয়, শােনো আমার কথা— মায়ের গয়না তাে আমার জন্যে আছে— তাই নিয়ে—”

 “চুপ, চুপ, তাের গয়নায় কি আমরা হাত দিতে পারি?”

 “আমি তাে পারি।”

 “না, তুইও পারিস নে। থাক সে-সব কথা, এখন ঘুমােতে যা।”

 কলকাতা শহরের সকাল, কাকের ডাক ও স্ক্যাভেঞ্জারের গাড়ির খড়খড়ানিতে রাত পােয়াল। দূরে কখনাে স্টীমারের, কখনাে তেলের কলের বাঁশি বাজে। বাসার সামনের রাস্তা দিয়ে একজন লােক মই কাঁধে জ্বরারি বটিকার বিজ্ঞাপন খাটিয়ে চলেছে; খালি-গাড়ির দুটো গােরু গাড়ােয়ানের দুই হাতের প্রবল তাড়ার উত্তেজনায় গাড়ি নিয়ে দ্রুতবেগে ধাবমান; কল থেকে জল নেবার প্রতিযােগিতায় এক হিন্দুস্থানি মেয়ের সঙ্গে উড়িয়া ব্রাহ্মণের ঠেলাঠেলি বকাবকি জমেছে। বিপ্রদাস বারান্দায় ব’সে; গুড়গুড়ির নলটা হাতে; মেজেতে পড়ে আছে না-পড়া খবরের কাগজ।

 কুমু এসে বললে, “দাদা, ‘না’ ব’লো না।”

 “আমার মতের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবি তুই? তাের শাসনে রাতকে দিন, না-কে হাঁ করতে হবে?”

 “না, শােনাে বলি;—আমার গয়না নিয়ে তােমার ভাবনা ঘুচুক।”

 “সাধে তােকে বলি বুড়ী? তাের গয়না নিয়ে আমার ভাবনা ঘুচবে এমন কথা ভাবতে পারলি কোন্ বুদ্ধিতে?”

 “সে জানি নে, কিন্তু তােমার এই ভাবনা আমার সয় না।”

৩০