পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যেখানে রূপ সেখানে তাকে বলি ‘অবাক চাকি’, যেখানে বস্তু সেখানে তাকে বলি মিষ্টান্ন। সম্পাদকমশায়ের সংজ্ঞা হচ্ছে ‘সম্পাদক’, এখানে অর্থ মিলিয়ে আদালতে হলফ করে বলতে পারি শব্দের সঙ্গে বিষয়ের ষোলো আনা মিল আছে। কিন্তু সেখানে তিনি বিষয় নন, রূপ—অর্থাৎ স্বতন্ত্র ও একমাত্র—সেখানে কোনো একটামাত্র সংজ্ঞা দিয়ে তাঁকে বাঁধা অসম্ভব। সেখানে তাঁর আছে নাম। সেই নামের সঙ্গে মিলিয়ে শত্রু মিত্র কেউ তাঁর যাচাই করে না। পিতামাতা যদি তাঁকে ‘সম্পাদক’ নামই দিতেন তবে নাম সার্থক করবার জন্য সম্পাদক হবার কোনো দরকারই তাঁর থাকত না।

 গল্প জিনিসটাও রূপ; ইংরেজিতে যাকে বলে ক্রিয়েশন। আমি তাই বলি, গল্পের এমন নাম দেওয়া উচিত নয় যেটা সংজ্ঞা, অর্থাৎ যেটাতে রূপের চেয়ে বস্তুটাই নির্দিষ্ট। বিষবৃক্ষ নামটাতে আমি আপত্তি করি। কৃষ্ণকান্তের উইল নামে দোষ নেই। কেননা ও-নামে গল্পের কোনো ব্যাখ্যাই করা হয় নি।

 সম্পাদকমশায় যখন গল্পের নামের জন্যে পেয়াদা পাঠালেন তাড়াতাড়ি তখন ‘তিন পুরুষ’ নামটা দিয়ে তাকে বিদায় করা গেল। তার পরক্ষণেই নামটা কাহিনীর আঁচলের সঙ্গে তার গ্রন্থিবন্ধন করে নিয়ে কানে কানে মুহূর্তে মুহূর্তে বলতে লাগল, যদেতৎ অর্থং মম তদস্তু রূপং তব। আমার সঙ্গে তোমাকে সম্পূর্ণ মিলে চলতে হবে। ছায়েবানুগতাস্বচ্ছা ইত্যাদি। কাহিনী বলে, তার মানে কী হল? নাম বলে, বাক্যে ভাবে আজ থেকে আমাকে সপ্রমাণ করে চলাই তোমার ধর্ম। কাহিনী বলে, রেজিস্টার বইয়ে কর্তার তাড়ায় সম্মতি সই করেছি বটে, কিন্তু আজ আমি হাজার হাজার পাঠকের সামনে দাঁড়িয়ে সেটা বেকবুল যেতে চাই।

 কর্তা বলেন, তিন পুরুষের তিন-তোরণ-ওআলা রাস্তা দিয়ে গল্পটা চলে

৩০৭