পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 দ্বিতীয়বার বিপ্রদাসের বৈঠকখানায় ঘটকের আগমন। তুড়ি দিয়ে শিব শিব বলে বৃদ্ধ উচ্চস্বরে হাই তুললে। এবারে অসম্মতি দিয়ে কথাটাকে শেষ করে দিতে বিপ্রদাসের সাহস হল না। ভাবলে এতবড়াে দায়িত্ব নিই কী করে? কেমন করে নিশ্চয় জানব কুমুর পক্ষে এ-সম্বন্ধ সব চেয়ে ভালাে নয়? পরশুদিন শেষকথা দেবে বলে ঘটককে বিদায় করে দিলে।


১১

 সন্ধ্যার অন্ধকার মেঘের ছায়ায় বৃষ্টির জলে নিবিড়। কুমুর আসবাবপত্র বেশি কিছু নেই। এক পাশে ছােটো খাট, আলনায় গুটি দুয়েক পাকান শাড়ি আর চাঁপা রঙের গামছা। কোণে কাঁঠাল-কাঠের সিন্ধুক, তার মধ্যে ওর ব্যবহারের কাপড়। খাটের নিচে সবুজ রঙ-করা টিনের বাক্সে পান সাজবার সরঞ্জাম, আর একটা বাক্সে চুল বাঁধবার সামগ্রী। দেয়ালের খাঁজের মধ্যে কাঠের থাকে কিছু বই, দোয়াতকলম, চিঠির কাগজ, মায়ের হাতের পশমে-বােনা বাবার সর্বদা ব্যবহারের চটিজুতাে-জোড়া; শোবার খাটের শিয়রে রাধাকৃষ্ণের যুগলরূপের পট। দেয়ালের কোণে ঠেসানাে একটা এসরাজ।

 ঘরে কুমু আলাে জ্বালায় নি। কাঠের সিন্দুকের উপর বসে জানলার বাইরে চেয়ে আছে। সামনে ইঁটের কলেবরওআলা কলিকাতা, আদিম কালের বর্মকঠিন একটা অতিকায় জন্তুর মতো, জলধারার মধ্য দিয়ে ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে তার গায়ে গায়ে আলােকশিখার বিন্দু। কুমুর মন তখন ছিল অদৃষ্টনিরূপিত তার ভাবীলােকের মধ্যে। সেখানকার ঘরবাড়ি-লােকজন সবই তার আপন আদর্শে গড়া। তারই মাঝখানে নিজের সতীলক্ষ্মী-রূপের প্রতিষ্ঠা, কত ভক্তি, কত পূজা, কত সেবা। তার নিজের মায়ের পুণ্যচরিতে এক জায়গায় একটা গভীর ক্ষত

৩৭