পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 তখনও অন্ধকার, প্রথম পাখির দ্বিধাজড়িত কাকলি শােনবামাত্র ও বিছানা ছেড়ে চলে গেল।

 বিপ্রদাস সমস্ত রাত ছটফট করেছে। সন্ধ্যার সময় জ্বর-গায়েই বিবাহসভায় যাবার জন্যে ওর ঝোঁক হল। ডাক্তার অনেক চেষ্টায় চেপে রেখে দিলে। ঘন ঘন লােক পাঠিয়ে সে খবর নিয়েছে। খবরগুলাে যুদ্ধের সময়কার খবরের মতাে, অধিকাংশই বানানাে। বিপ্রদাস জিজ্ঞাসা করলে, “কখন বর এল? বাজনাবাদ্যির আওয়াজ তাে পাওয়া গেল না।”

 সংবাদদাতা শিবু বললে, “আমাদের জামাই বড়ো বিবেচক-বাড়িতে অসুখ শুনেই সব থামিয়ে দিয়েছে—বরযাত্রদের পায়ের শব্দ শােনা যায় না, এমনি ঠাণ্ডা।”

 “ওরে শিবু, খাবার জিনিস তো কুলিয়েছিল? আমার ওই এক ভাবনা ছিল, এ তো কলকাতা নয়!”

 “কুলােয় নি? বলেন কী হুজুর? কত ফেলা গেল। আরও অতগুলাে লােককে খাওয়াবার মতাে জিনিস বাকি আছে।”

 “ওরা খুশি হয়েছে তাে?”

 “একটি নালিশ কারও মুখে শোনা যায় নি। একেবারে টুঁ শব্দটি না। আরও তাে এত এত বিয়ে দেখেছি, বরযাত্রের দাপাদাপিতে কন্যাকর্তার ভির্মি লাগে! এরা এমনি চুপ, আছে কি না-আছে বােঝাই যায় না।”

 বিপ্রদাস বললে, “ওরা কলকাতার লােক কি না, তাই ভদ্র ব্যবহার জানা আছে। ওরা বােঝে যে, যে-বাড়ি থেকে মেয়ে নেবে তাদের অপমানে নিজেদেরই অপমান।”

 “আহা হুজুর যা বললেন এই কথাটি ওদের লােকজনদের আমি শুনিয়ে দেব। শুনলে ওরা খুশি হবে।”

 কুমু কাল সন্ধ্যের সময়েই বুঝেছিল অসুখ বাড়বার মুখে। অথচ

৫৮