পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 অন্দরমহলে তেতলায় কুমুদিনীর শােবার ঘর। মস্ত বড় খাট মেহগনি কাঠের; ফ্রেমে নেটের মশারি, তাতে সিল্কের ঝালর। বিছানার পায়ের দিকে পুরাে বহরের একটা নিরাবরণ মেয়ের ছবি, বুকের উপর দুই হাত চেপে লজ্জার ভান করছে। শিয়রের দিকে মধুসূদনের নিজের অয়েলপেণ্টিং, তাতে তার কাশ্মীরি শালের কারুকার্যটাই সব চেয়ে প্রকাশমান। একদিকে দেয়ালের গায়ে কাপড় রাখবার দেরাজ, তার উপরে আয়না; আয়নার দু-দিকে দুটো চীনেমাটির শামাদান, সামনে চীনেমাটির থালির উপর পাউডারের কৌটো, রুপাে-বাঁধানাে চিরুনি, তিন-চার রকমের এসেন্স, এসেন্স ছিটোবার পিচকারি এবং আরও নানা রকমের প্রসাধনের সামগ্রী, বিলিতি অ্যাসিস্টেণ্টের কেনা। নানাশাখাযুক্ত গােলাপি কাঁচের ফুলদানিতে ফুলের তােড়া। আর-একদিকে লেখবার টেবিল, তাতে দামি পাথরের দোয়াতদান, কলম ও কাগজকাটা। ইতস্তত মােটা গদিওআলা সােফা ও কেদারা— কোথাও-বা টিপাই, তাতে চা খাওয়া যায়, তাসখেলা যেতেও পারে। নতুন মহারানীর উপযুক্ত শয়নঘর কী রকম হওয়া বিধিসংগত এ-কথা মধুসূদনকে বিশেষভাবে চিন্তা করতে হয়েছে। এমন হয়ে উঠল, যেন অন্দরমহলের সর্বোচ্চতলার এই ঘরটি ময়লা কাঁথা গায়ে-দেওরা ভিখিরির মাথায় জরিজহরত-দেওয়া পাগড়ি।

 অবশেষে একসময়ে গােলমাল-ধুমধামের বানডাকা দিন পার হয়ে রাত্রিবেলা কুমু এই ঘরে এসে পৌঁছল। তাকে নিয়ে এল সেই মােতির মা। সে ওর সঙ্গে আজ রাত্রে শােবে ঠিক হয়েছে। আরও একদল মেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আসছিল। তাদের কৌতুহল ও আমােদের নেশা মিটতে চায় না—মােতির মা তাদের বিদায় করে দিয়েছে। ঘরের মধ্যে এসেই এক হাতে সে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বললে, “আমি কিছুখনের জন্যে যাই

৭৮