পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

খুব মোটা পইতে। ব্রাহ্মণ-মর্যাদার প্রমাণ ক্ষীণ হওয়াতে পইতেটা হয়েছিল প্রমাণসই।

 মফস্বল ইস্কুলে মধুসূদনের প্রথম শিক্ষা। সঙ্গে সঙ্গে অবৈতনিক শিক্ষা ছিল নদীর ধারে, আড়তের প্রাঙ্গণে, পাটের গাঁটের উপর চ’ড়ে ব’সে। যাচনদার খরিদদার গোরুর গাড়ির গাড়োয়ানদের ভিড়ের মধ্যেই তার ছুটি, যেখানে বাজারে টিনের চালাঘরে সাজানো থাকে সারবাঁধা গুড়ের কলসী, আঁটিবাঁধা তামাকের পাতা, গাঁটবাঁধা বিলিতি র‍্যাপার, কেরোসিনের টিন, সরষের ঢিবি, কলাইয়ের বস্তা, বড়ো বড়ো তৌল-দাঁড়ি আর বাটখারা, সেইখানে ঘুরে তার যেন বাগানে বেড়ানোর আনন্দ।

 বাপ ঠাওরালে ছেলেটার কিছু হবে। ঠেলেঠুলে গোটা দুত্তিন পাস করাতে পারলেই ইস্কুলমাস্টারি থেকে মোক্তারি ওকালতি পর্যন্ত ভদ্রলোকদের যে-কয়টা মোক্ষতীর্থ তার কোনো-না-কোনোটাতে মধু ভিড়তে পারবে। অন্য তিনটে ছেলের ভাগ্যসীমারেখা গোমস্তাগিরি পর্যন্তই পিলপে-গাড়ি হয়ে রইল। তারা কেউ বা আড়তদারের কেউ বা তালুকদারের দফতরে কানে কলম গুঁজে শিক্ষানবিশিতে বসে গেল। আনন্দ ঘোষালের ক্ষীণ সর্বস্বের উপর ভর করে মধুসূদন বাসা নিলে কলকাতার মেসে।

 অধ্যাপকেরা আশা করেছিল পরীক্ষায় এ-ছেলে কলেজের নাম রাখবে। এমন সময় বাপ গেল মারা। পড়বার বই, মায় নোটবই সমেত, বিক্রি করে মধু পণ করে বসল, এবার সে রোজগার করবে। ছাত্রমহলে সেকেণ্ডহ্যাণ্ড বই বিক্রি করে ব্যবসা হল শুরু। মা কেঁদে মরে— বড়ো তার আশা ছিল, পরীক্ষা-পাসের রাস্তা দিয়ে ছেলে ঢুকবে ‘ভদ্দোর’ শ্রেণীর ব্যুহের মধ্যে। তার পরে ঘোষাল-বংশদণ্ডের আগায় উড়বে কেরানিবৃত্তির জয়পতাকা।

 ছেলেবেলা থেকে মধুসুদন যেমন মাল বাছাই করতে পাকা, তেমনি