পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8brbr রবীন্দ্র-রচনাবলী যদিচ আমার মনে সংশয় ছিল, এরূপ শিক্ষা দিবার শক্তি র্তাহার আছে কি না, তৰু আমি তাহাকে বলিলাম, আচ্ছ বেশ আপনার নিজের প্রণালীমতোই কাজ করিবেন, আমি কোনো প্রকার ফরমাশ করিতে চাই না । বোধ করি ক্ষণকালের জন্ত র্তাহার মন অমুকুল হইয়াছিল, কিন্তু পরক্ষণেই বলিলেন, না, আমার এ কাজ নহে। বাগবাজারের একটি বিশেষ গলির কাছে তিনি আত্মনিবেদন করিয়াছিলেন—সেখানে তিনি পাড়ার মেয়েদের মাঝখানে থাকিয়া শিক্ষা দিবেন তাহা নহে, শিক্ষা জাগাইয়া তুলিবেন । মিশনরির মতো মাথা গণনা করিয়া দলবৃদ্ধি করিবার সুযোগকে, কোনো একটি পরিবারের মধ্যে নিজের প্রভাব বিস্তারের উপলক্ষ্যকে, তিনি অবজ্ঞা করিয়া পরিহার করিলেন । گر তাহার পরে মাঝে মাঝে নানাদিক্ দিয়া তাহার পরিচয়-লাভের অবসর আমার ঘটিয়াছিল। র্তাহার প্রবল শক্তি আমি অনুভব করিয়াছিলাম কিন্তু সেই সঙ্গে ইহাও বুঝিয়াছিলাম তাহার পথ আমার চলিবার পথ নহে। তাহার সর্বতোমুখী প্রতিভা ছিল, সেই সঙ্গে তাহার আর একটি জিনিস ছিল, সেটি তাহার যোদ্ধত্ব । র্তাহার বল ছিল এবং সেই বল তিনি অন্যের জীবনের উপর একাস্ত বেগে প্রয়োগ করিতেন— মনকে পরাভূত করিয়া অধিকার করিয়া লইবার একটা বিপুল উৎসাহ তাহার মধ্যে কাজ করিত। যেখানে তাহাকে মানিয়া চলা অসম্ভব সেখানে তাহার সঙ্গে মিলিয়া চলা কঠিন ছিল । অন্তত আমি নিজের দিক দিয়া বলিতে পারি তাহার সঙ্গে আমার মিলনের নানা অবকাশ ঘটিলেও এক জায়গায় অস্তরের মধ্যে আমি গভীর বাধা অনুভব করিতাম। সে যে ঠিক মতের অনৈক্যের বাধা তাহা নহে, সে যেন একটা বলবান আক্রমণের বাধা । আজ এই কথা আমি অসংকোচে প্রকাশ করিতেছি তাহার কারণ এই যে, একদিকে তিনি আমার চিত্তকে প্রতিহত করা সত্ত্বেও অার একদিকে র্তাহার কাছ হইতে যেমন উপকার পাইয়াছি এমন আর কাহারও কাছ হুইতে পাইয়াছি বলিয়া মনে হয় না। র্তাহার সহিত পরিচয়ের পর হইতে এমন বারংবার ঘটিয়াছে যখন র্তাহার চরিত স্মরণ করিয়া ও র্তাহার প্রতি গভীর ভক্তি অনুভব করিয়া আমি প্রচুর বল পাইয়াছি। নিজেকে এমন করিয়া সম্পূর্ণ নিবেদন করিয়া দিবার আশ্চর্য শক্তি আর কোনো মাচুষে প্রত্যক্ষ করি নাই । সে সম্বন্ধে তাহার নিজের মধ্যে যেন কোনো প্রকার বাধাই ছিল না। তাহার শরীর, তাহার আশৈশব যুরোপীয় অভ্যাস, র্তাহার আত্মীয় স্বজনের মেহমমত, তাহার স্বদেশীয় সমাজের উপেক্ষা এবং যাহাদের জন্য তিনি প্রাণ সমর্পণ