পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাটক ও প্রহসন Տ Գ ( শ্যামাসুন্দরী। খোলসা করে কথা বললেই কি দােষ হয় ভাই! মুখ দেখে বুঝতে পারি নে? তা, দোষ দেব না তোমাকে। ও আমাদের আপনি বলেই কি চোখের মাথা খেয়ে বসেছি ? কিন্তু বড়ো শক্ত হাতে পড়েছ বউ, বুঝে সুঝে চােলো। ভয় নেই, বকুল ফুল, যাচ্ছি। আমি। ভাবলুম তুমি নেই এই ফাকে নতুন বউয়ের সঙ্গে একটু আলাপ করে আসি গে। তা সত্যি বটে, এ কৃপণের ধন, সাবধানে রাখতে হবে। সাইকে বলছিলুম আমাদের দেওরের এ যেন আধিকপালে মাথা ধরা ; বউকে ধরেছে। ওর বা দিকের পাওয়ার কপালে, ডান দিকের রাখার কপালে যদি ধরতে পারে তবেই পুরোপুরি হবে। ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে মুহূর্ত পরেই পুনঃপ্রবেশ একটা পান নেও, দোক্তা খাওয়া অভ্যোস আছে ? কুমুদিনী। না। মুখে একটিপ দোক্তা নিয়ে শ্যামার প্রস্থান ছি ছি, কী বললেন উনি! স্বামীর বয়স বেশি বলে তঁকে ভালোবাসি নে, এ কথা কখনোই সত্য নয়— লজ্জা, লজ্জা, এ যে ইতর মেয়েদের মতো কথা! ছোটোবাউ, আমাকে একবার তোমাদের পুজোর ঘরে নিয়ে চলো। মোতির মা। আর তো দেরি নেই, সময় হয়ে এল। কুমুদিনী। সেখানে একবার যদি না যেতে পারি। হাঁপিয়ে মরে যাব। মোতির মা। আচ্ছা চলো, দেরি কোরো না। কুমুদিনী। আমি ঠাকুরের পায়ে কেবল একটি ফুল দিয়ে আসব, আর কিছুই না। | উভয়ের প্রস্থান মধুসূদন ধীরে ধীরে এসে পুতির থলি দেরাজ থেকে বের করে নিয়ে পকেটে ভরল শ্যামাসুন্দরীর প্রবেশ শ্যামাসুন্দরী। অসময়ে ঠাকুরপো যে এখানে ? শূন্য খাঁচার দিকে বেড়ালের মতো তাকিয়ে আছ। লোকে বলবে কী ? বাড়াবাড়ি ভালো নয়। মধুসূদন। চুপ করো, তোমার রসিকতা ভালো লাগছে না। শ্যামাসুন্দরী। আমার মুখে ভালো লাগছে না, রস জোগাবার লোক এসেছে যে। মধুসূদন। আজকাল তোমার আস্পর্ধ কেবল বেড়ে যাচ্ছে, আগে এমন ছিল না। শ্যামাসুন্দরী। আদর কমলেই আস্পর্ধ বাড়ে— কী আর রইল বাকি যে ভয় করব? মধুসূদন। বাকি রয়েছে এখানে তোমার আশ্রয়। শ্যামাসুন্দরী। এক বউকে এনেছ বলে বাড়ির আর-এক বউকে রাখবার জায়গা যদি না তা হলে গলায় দড়ি দিয়ে মরবারও তো গাছতলাটা মিলবে। মধুসূদন। একটা কথা বলে রাখি, বড়োবউয়ের সঙ্গে যদি মিলে মিশে না থাকতে পার তা হলে রজবপুরের বাসায় তোমাকে পাঠিয়ে দেব। শ্যামাসুন্দরী। বড়োবউয়ের সঙ্গে আমার মেলামেশার কথা ভেবাে না, নিজের কথাটা ভেবে দেখো৷ তুমি আমি এক দরের লোক, মিলতে পেরেছি। খুব সহজে, এত সহজে যে লোকে কানাকনি করেছে। তামায় পিতলে গলিয়ে এক করা যায়, কিন্তু তামায় হীরেয় গলিয়ে মেলানো যায় না। মধুসূদন। মানে কী হ’ল ? մ. শ্যামাসুন্দরী। মানে এই, বউ এনেছ, ওকে সিংহাসনে বসানো কিন্তু ওকে অর্ধাঙ্গ