পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

દરૂર রবীন্দ্র-রচনাবলী । বালিকার প্রবেশ বালিকা। আমার কি দাড়াবার জো আছে ! বেলা বয়ে যায় যে । অমল। তোমার দাড়াতে ইচ্ছা করছে না— আমারও এখানে আর বসে থাকতে ইচ্ছা করে না । বালিকা। তোমাকে দেখে আমার মনে হচ্ছে যেন সকালবেলাকার তারা— তোমার কী হয়েছে বলে তো । অমল । জানি নে কী হয়েছে, কবিরাজ আমাকে বেরোতে বারণ করেছে। বালিকা । আহা, তবে বেরিয়ো না— কবিরাজের কথা মেনে চলতে হয়— হ্রস্তুপন করতে নেই, তা হলে লোকে দুষ্ট বলবে। বাইরের দিকে তাকিয়ে তোমার । মন ছটফট করছে, আমি বরঞ্চ তোমার এই আধখানা দরজা বন্ধ করে দিই। অমল। না, না, বন্ধ কোরো না— এখানে আমার আর-সব বন্ধ কেবল এইটুকু খোলা । তুমি কে বলো-না— আমি তো তোমাকে চিনি নে! বালিকা। আমি সুধা । অমল । স্বধা ? স্বধা। জান না ? আমি এখানকার মালিনীর মেয়ে । অমল। তুমি কী কর ? স্বধা। সাজি ভরে ফুল তুলে নিয়ে এসে মালা গাথি । এখন ফুল তুলতে চলেছি। অমল। ফুল তুলতে চলেছ ? তাই তোমার পা দুটি অমন খুশি হয়ে উঠেছে— যতই চলেছ, মল বাজছে ঝম্ ঝম্ ঝম। আমি যদি তোমার সঙ্গে যেতে পারতুম, তা হলে উচু ডালে যেখানে দেখা যায় না সেইখান থেকে আমি তোমাকে ফুল পেড়ে দিতুম। স্বধা। তাই বৈকি! ফুলের খবর আমার চেয়ে তুমি নাকি বেশি জান ! অমল। জানি, আমি খুব জানি। আমি সাত ভাই চম্পার খবর জানি। আমার মনে হয় আমাকে যদি সবাই ছেড়ে দেয় তা হলে আমি চলে যেতে পারি খুব ঘন বনের মধ্যে যেখানে রাস্তা খুজে পাওয়া যায় না। সরু ডালের সব-আগায় যেখানে মনুয়া পাখি বসে বসে দোল খায় সেইখানে আমি চাপা হয়ে ফুটতে পারি। তুমি আমার পারুলদিদি হবে ? স্বধা । কী বুদ্ধি তোমার ! পারুলদিদি আমি কী করে হব ! আমি যে স্থধ— আমি শশী মালিনীর মেয়ে । আমাকে রোজ এত এত মালা গাঁথিতে হয়। আমি যদি তোমার মতো এইখানে বলে থাকতে পারতুম তা হলে কেমন মজা হত !