পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8の8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী । আমি বলবার আগে তুমি তাকে একবার ডেকে বুঝিয়ে বললে ভালো হয় না ? আমি তো তিন হাজার বার বলেছি । সে আমার কথা রাখে না । আমি তাকে বলতে পারব । তোমার কি মনে হয়, সে করবে না ? চারু । আরো তো অনেকবার চেষ্টা দেখা গেছে, কোনোমতে তো রাজি হয় নি । ভূপতি । কিন্তু এবারকার এ প্রস্তাবটা তার পক্ষে ছাড়া উচিত হবে না। আমার অনেক দেনা হয়ে গেছে, অমলকে আমি তো আর সেরকম করে আশ্রয় দিতে পারব না । ভূপতি অমলকে ডাকিয়া পাঠাইল । অমল আসিলে তাহাকে বলিল, “বর্ধমানের উকিল রঘুনাথবাবুর মেয়ের সঙ্গে তোমার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। তার ইচ্ছে বিবাহ দিয়ে তোমাকে বিলেত পাঠিয়ে দেবেন । তোমার কী মত ।” অমল কহিল, “তোমার যদি অনুমতি থাকে, আমার এতে কোনো অমত নেই।” অমলের কথা শুনিয়া উভয়ে আশ্চর্য হইয়া গেল । সে যে বলিবামাত্রই রাজি হুইবে, এ কেহ মনে করে নাই । চারু তীব্ৰস্বরে ঠাট্টা করিয়া কহিল, “দাদার অনুমতি থাকলেই উনি মত দেবেন। কী আমার কথার বাধ্য ছোটাে ভাই । দাদার 'পরে ভক্তি এতদিন কোথায় ছিল, ঠাকুরপো ?” অমল উত্তর না দিয়া একটুখানি হাসিবার চেষ্টা করিল। অমলের নিরুত্তরে চারু যেন তাহাকে চেতাইয়া তুলিবার জন্য দ্বিগুণতর ঝাজের সঙ্গে বলিল, “তার চেয়ে বলো-না কেন, নিজের ইচ্ছে গেছে । এতদিন ভান করে থাকবার কী দরকার ছিল যে বিয়ে করতে চাও না ? পেটে খিদে মুখে লাজ !” ভূপতি উপহাস করিয়া কহিল, “আমল তোমার খাতিরেই এতদিন খিদে চেপে রেখেছিল, পাছে ভাজের কথা শুনে তোমার হিংসা হয় ।” চারু এই কথায় লাল হইয়া উঠিয়া কোলাহল করিয়া বলিতে লাগিল, “হিংসে । তা বৈকি । কখখনো আমার হিংসে হয় না । ওরকম করে বলা তোমার ভারি অন্যায় ।” ভূপতি । ঐ দেখো । নিজের স্ত্রীকে ঠাট্টাও করতে পারব না । চারু । না, ওরকম ঠাট্টা আমার ভালো লাগে না । ভূপতি । আচ্ছা, গুরুতর অপরাধ করেছি । মাপ করো। যা হোক, বিয়ের প্রস্তাবটা তা হলে স্থির ? অমল কহিল, “ইহা ।” চারু । মেয়েটি ভালো কি মন্দ তাও বুঝি একবার দেখতে যাবারও তাঁর সইল না । তোমার যে এমন দশা হয়ে এসেছে তা তো একটু আভাসেও প্রকাশ কর নি । ভূপতি । অমল, মেয়ে দেখতে চাও তো তার বন্দোবন্ত করি । খবর নিয়েছি মেয়েটি সুন্দরী { অমল । না, দেখবার দরকার দেখি নে । চারু । ওর কথা শোন কেন । সে কি হয় । কনে না দেখে বিয়ে হবে ? ও না দেখতে চায় আমরা তো দেখে নেব । অমল । না দাদা, ঐ নিয়ে মিথ্যে দেরি করবার দরকার দেখি নে । চারু । কাজ নেই বাপু- দেরি হলে বুক ফেটে যাবে । তুমি টােপর মাথায় দিয়ে এখনই বেরিয়ে পড়ো । কী জানি, তোমার সাত রাজার ধন মানিকটিকে যদি আর কেউ কেড়ে নিয়ে যায় } অমলকে চারু কোনো ঠাট্টাতেই কিছুমাত্র বিচলিত করিতে পারিল না । চারু । বিলেত পালাবার জন্যে তোমার মনটা বুঝি দৌড়াচ্ছে ? কেন, এখানে আমরা তোমাকে মারছিলুম না ধরছিলুম। হ্যাট কোট পরে সাহেব না। সাজলে এখনকার ছেলেদের মন ওঠে না | ঠাকুরপো, বিলেত থেকে ফিরে এসে আমাদের মতো কালা আদমিদের চিনতে পারবে তো ? অমল কহিল, “তা হলে আর বিলেত যাওয়া কী করতে ।”