পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓmiq}ኝ 8S নোটো তাহাকে কোচাইয়া দিয়াছে, তিনি তাহা পরিয়াছেন এবং তাহার পর- তাহার পর কী হুইল সেটা হঠাৎ তাহার কল্পনাশক্তিতে জোগাইয়া উঠে নাই- রাসমণি নিজেই সেটুকু পূরণ করিয়া বলিয়াছেন- নিশ্চয়ই তুমি তোমার বাহিরের বৈঠকখানার ঘরে ছাড়িয়া রাখিয়াছিলে, সেখানে যে খুশি আসে যায়, কে চুরি করিয়া লইয়াছে। ভবানীচরণের সম্বন্ধে এইরূপ ব্যবস্থা । কিন্তু নিজের ছেলেকে তিনি কোনো অংশেই স্বামীর সমকক্ষ বলিয়া গণ্য করতেন না । সে তো তঁহারই গর্ভের সন্তান- তাহার আবার কিসের বাবুয়ানা ! সে হইবে শক্তসমর্থ কাজের লোক- অনায়াসে দুঃখ সহিবে ও খাটিয়া খাইবে । তাহার এটা নাহিলে চলে না, ওটা নাহিলে অপমান বোধ হয়, এমন কথা কোনোমতেই শোভা পাইবে না । কালীপদ সম্বন্ধে রাসমণি খাওয়া-পরায় খুব মোটা রকমই বরাদ্দ করিয়া দিলেন । মুড়িগুড় দিয়াই তাহার জলখাবার সারিলেন এবং মাথা-কানি ঢাকিয়া দোলাই পরাইয়া তাহার শীতনিবারণের ব্যবস্থা করিলেন । গুরুমশায়াকে স্বয়ং ডাকিয়া বলিয়া দিলেন, ছেলে যেন পড়াশুনায় কিছুমাত্ৰ শৈথিল্যে করিতে না পারে, তাহাকে যেন বিশেষরূপ শাসনে সংযত রাখিয়া শিক্ষা দেওয়া হয় । এইখানে বড়ো মুশকিল বাধিল । নিরীহ স্বভাব ভবানীচরণ মাঝে মাঝে বিদ্রোহের লক্ষণ প্ৰকাশ করিতে লাগিলেন, কিন্তু রাসমণি যেন তাহা দেখিয়াও দেখিতে পাইলেন না। ভবানী প্রবলপক্ষের কাছে চিরদিনই হার মানিয়াছেন, এবারেও তাহকে অগত্যা হার মানিতে হইল, কিন্তু মন হইতে তাহার বিরুদ্ধতা ঘুচিল না। এ ঘরের ছেলে দোলাই মুড়ি দিয়া গুড়মুড়ি খায়, এমন বিসদৃশ দৃশ্য দিনের পর निन कि अशों याग्र । পূজার সময় তাহার মনে পড়ে, কর্তাদের আমলে নূতন সাজসজা পরিয়া তাহারা কিরূপ উৎসাহ বোধ করিয়াছেন । পূজার দিনে রাসমণি কালীপদার জন্য যে সন্তা কাপড়জামার ব্যবস্থা করিয়াছেন সাবেক কালে তাহদের বাড়ির ভূত্যেরাও তাঁহাতে আপত্তি করিত । রাসমণি স্বামীকে অনেক করিয়া বুঝাইবার চেষ্টা করিয়াছেন যে, কালীপদকে যাহা দেওয়া যায় তাহতেই সে খুশি হয়, সে তো সাবেক দত্তরের কথা কিছু জানে না- তুমি কেন মিছামিহি মন ভার করিয়া থাক । কিন্তু ভবানীচরণ কিছুতেই ভুলিতে পারেন না যে, বেচারা কালীপদ আপন বংশের গীেরব জানে না বলিয়া তাহকে ঠকানো হইতেছে। বস্তুত সামান্য উপহার পাইয়া সে যখন গর্বে ও আনন্দে নৃত্য করিতে করিতে তাহাকে ছুটিয়া দেখাইতে আসে তখন তাহাতেই ভবানীচরণকে যেন আরো আঘাত করিতে থাকে । তিনি সে কিছুতেই দেখিতে পারেন না। তাহাকে মুখ ফিরাইয়া চলিয়া যাইতে হয় । ভবানীচরণের মকদ্দমা চালাইবার পর হইতে তাহাদের শুরুঠাকুরের ঘরে বেশ কিঞ্চিৎ অর্থসমাগম হইয়াছে। তাহাতে সন্তুষ্ট না থাকিয়া গুরুপুত্রটি প্রতিবৎসর পূজার কিছু পূর্বে কলিকাতা হইতে নানাপ্রকার চোখ-ভোলানো সন্তা শৌখিন জিনিস আনাইয়া কয়েক মাসের জন্য ব্যাবসা চালাইয়া থাকেন। অদৃশ্য কালি, ছিপ-ছড়ি-হাতার একত্র সমবায়, ছবি-আঁকা চিঠির কাগজ, নিলামে-কেনা নানা রঙের পচা রেশম ও সাটিনের থান, কবিতা-লেখা পাড়ওয়ালা শাড়ি প্রভৃতি লইয়া তিনি গ্রামের নরনারীর মন উতলা করিয়া দেন। কলিকাতার বাবুমহলে আজকাল এই সমান্ত উপকরণ না হইলে ভদ্রতা রক্ষা হয় না শুনিয়া গ্রামের উচ্চাভিলাষী ব্যক্তিমাত্রই আপনার গ্ৰাম্যতা ঘুচাইবার জন্য সাধ্যাতিরিক্ত ব্যয় করিতে ছাড়েন না । একবার বগলাচরণ একটা অত্যাশ্চর্য মেমের মূর্তি আনিয়াছিলেন । তার কোন-এক জায়গায় দম দিলে মেম চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া দাড়াইয়া প্রবল বেগে নিজেকে পাখা করিতে থাকে । এই বীজমপরায়ণ গ্ৰীষ্মকাতর মোমমূর্তিটির প্রতি কালীপদার অত্যন্ত লোভ জন্মিল। কালীপদ তাহার মাকে বেশ চেনে, এইজন্য মার কাছে কিছু না বলিয়া ভবানীচরণের কাছে করুশকণ্ঠে আবেদন উপস্থিত করিল। ভবানীচরণ তখনই উদারভাবে তাহাকে আশ্বন্ত করিলেন, কিন্তু তাহার দাম শুনিয়া তাহার মুখ শুকাইয়া গেল । টাকাকডি আদায়ও করেন রাসমণি, তহবিলও ঠাহার কাছে, খরচও তাহার হাত দিয়াই হয় । SS ON