পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঝের থেকে চর পেয়ে যায় দশটি হাজার টাকা । কিন্তু, গুজব শুনতে পেলেম শেষে, কানে মোচড় খেয়ে টাকা ফেরত দিয়েছে সে ।” “কোন তুমি ফিরে এলে?” কেঁচাই চারি পাশে, যোগীনদাদা একটু কেবল হাসে । তার পরে তো শুতে গেলেম, আধেক রাত্রি ধরে শহরগুলোর নাম যত সব মাথার মধ্যে ঘোরে । ভারতভূমির সব ঠিকানাই ভুলি যদি দৈবে, যোগীনদাদার ভূগোল-গোলা গল্প মনে রইবে । বুধু সাতপুরিয়া নাম । চাষের তেমন সুবিধা নেই কৃপণ মাটির গুণে, পয়ত্রিশ ঘর তাতির বসত, ব্যাবসা জাজিম বুনে । নদীর ধারে খুঁড়ে খুঁড়ে পলির মাটি খুঁজে গৃহস্থেরা ফসল করে কাকুড়ে তরমুজে । ওইখানেতে বালির ডাঙা, মাঠ করছে ধু-ধু, ঢিবির পরে বসে আছে গায়ের মোড়ল বুধু । সামনে মাঠে ছাগল চরছে কটাশুকনো জমি, নেইকো ঘাসের ঘট । কী যে ওরা পাচ্ছে খেতে ওয়াই সেটা জানে, ছাগল বলেই বেচে আছে প্ৰাণে । আকাশে আজ হিমের আভাস, ফ্যাকাশে তার নীল, অনেক দূরে যাচ্ছে উড়ে চিল । হেমন্তের এই রোদদুরটা লাগছে অতি মিঠে, ছোটাে নাতি মোগলুটা তার জড়িয়ে আছে পিঠে । স্পর্শ পুলক লাগছে দেহে, মনে লাগছে ভয় বেঁচে থাকলে হয় । গুটি তিনটি মরে শেষে ওইটি সাধের নাতি, রাত্ৰিদিনের সাখি । গোরুর গাড়ির ব্যাবসা বুধুর চলছে হেসে-খেলেই, নাড়ি ছেড়ে এক পয়সা খরচ করতে গেলেই ।