পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ర్సిఆ রবীন্দ্র-রচনাবলী S? আশার পক্ষে সঙ্গিনীর বড়ো দরকার হইয়াছিল । ভালোবাসার উৎসবও কেবলমাত্র দুটি লোকের দ্বারা সম্পন্ন হয় না— স্বখালাপের মিষ্টান্ন বিতরণের জন্য বাজে লোকের দরকার হয় । 幢 ক্ষুধিতহদয়া বিনোদিনীও নববধূর নবপ্রেমের ইতিহাস মাতালের জালাময় মদের মতো কান পাতিয়া পান করিতে লাগিল । তাহার মস্তিষ্ক মাতিয়া শরীরের রক্ত জলিয়া উঠিল । নিস্তদ্ধ মধ্যাহ্নে মা যখন ঘুমাইতেছেন, দাসদাসীরা একতলার বিশ্রামশালায় অদৃপ্ত, মহেন্দ্র বিহারীর তাড়নায় ক্ষণকালের জন্য কালেজে গেছে এবং রৌদ্রতপ্ত নীলিমার শেষ প্রান্ত হইতে চিলের তীব্র কণ্ঠ অতিক্ষীণ স্বরে কদাচিৎ শুনা যাইতেছে, তখন নির্জন শয়নগৃহে নিচের বিছানার বালিশের উপর আশা তাহার খোলা চুল ছড়াইয়া শুইত এবং বিনোদিনী বুকের নিচে বালিশ টানিয়া উপুড় হইয়া শুইয়া গুনগুন-গুঞ্জরিত কাহিনীর মধ্যে আবিষ্ট হইয়া রহিত, তাহার কর্ণমূল আরক্ত হইয়া উঠিত, নিশ্বাস বেগে প্রবাহিত হইতে থাকিত । বিনোদিনী প্রশ্ন করিয়া করিয়া তুচ্ছতম কথাটি পর্যন্ত বাহির করিত, এক কথা বার বার করিয়া শুনিত, ঘটনা নিঃশেষ হইয়া গেলে কল্পনার অবতারণা করিত— কহিত, “আচ্ছা ভাই, যদি এমন হইত তো কী হইত, যদি আমন হইত তো কী করিতে।” সেই সকল অসম্ভাবিত কল্পনার পথে স্থখালোচনাকে সুদীর্ঘ করিয়া টানিয়া লইয়া চলিতে আশারও ভালো লাগিত । বিনোদিনী কহিত, “আচ্ছা ভাই চোখের বালি, তোর সঙ্গে যদি বিহারীবাবুর दिवांट् ट्झेऊ ।” আশা । না ভাই, ও-কথা তুমি বলিয়ে না— ছি ছি, আমার বড়ো লঙ্গ করে। কিন্তু তোমার সঙ্গে হইলে বেশ হুইত, তোমার সঙ্গেও তো কথা হইয়াছিল। বিনোদিনী । আমার সঙ্গে তো ঢের লোকের ঢের কথা হইয়াছিল। না হইয়াছে, বেশ হইয়াছে— আমি যা আছি, বেশ আছি । আশা তাহার প্রতিবাদ করে। বিনোদিনীর অবস্থা যে তাহার অবস্থার চেয়ে ভালো, এ-কথা সে কেমন করিয়া স্বীকার করিবে। “একবার মনে করিয়া দেখো দেখি ভাই বালি, যদি আমার স্বামীর সঙ্গে তোমার বিবাহ হইয়া যাইত। অার একটু হলেই তো হইত।”