পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭88 ब्रवैौटल-ब्रछमांवलौ মনে-মনে জান্দোলন করিতে করিতে হঠাৎ দেখিল, আশার মুখ পাংশুবর্ণ হইয়া গেছে, সে খাটের থাম ধরিয়া আছে, তাহার ঠোট-দুটি কঁাপিতেছে— কাপিতে কঁাপিতে সে হঠাৎ বেগে পাশের ঘর দিয়া চলিয়া গেল । মহেন্দ্র তখন ধীরে ধীরে গিয়া ফুলদানিটা কুড়াইয়া আনিয়া রাখিল । ঘরের কোণে তাহার পড়িবার টেবিল ছিল— চৌকিতে বসিয়া সেই টেবিলটার উপর হাতের মধ্যে মাথা রাখিয়া অনেকক্ষণ পড়িয়া রহিল । সন্ধ্যার পর ঘরে আলো দিয়া গেল, কিন্তু আশা আসিল না । মহেন্দ্র দ্রুতপদে ছাদের উপর পায়চারি করিয়া বেড়াইতে লাগিল। রাত্ৰি নটা বাজিল, মহেন্দ্রদের লোকবিরল গৃহ রাত-দুপুরের মতো নিস্তব্ধ হইয়া গেল— তবু আশা আসিল না । মহেন্দ্র তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইল । আশা সংকুচিতপদে আসিয়া ছাদের প্রবেশদ্বারের কাছে দাড়াইয়া রহিল । মহেন্দ্র কাছে আসিয়া তাহাকে বুকে টানিয়া লইল— মুহুর্তের মধ্যে স্বামীর বুকের উপর আশার কান্না ফাটিয়া পড়িল— সে আর থামিতে পারে না, তাহার চোখের জল আর ফুরায় না, কান্নার শব্দ গলা ছাড়িয়া বাহির হইতে চায়, সে আর চাপ থাকে না। মহেন্দ্র তাহাকে বক্ষে বদ্ধ করিয়া কেশচুম্বন করিল— নিঃশব্দ আকাশে তারাগুলি নিস্তব্ধ হইয়া চাহিয়া রহিল । রাত্রে বিছানায় বসিয়া মহেন্দ্র কহিল, “কালেজে আমাদের নাইট-ডিউটি অধিক পড়িয়াছে, অতএব এখন কিছুকাল আমাকে কালেজের কাছেই বাসা করিয়া থাকিতে হইবে।” আশা ভাবিল, “এখনো কি রাগ আছে । আমার উপর বিরক্ত হইয়। চলিয়া যাইতেছেন ? নিজের নিগুৰ্ণতায় আমি স্বামীকে ঘর হইতে বিদায় করিয়া দিলাম ? আমার তো মরা ভালো ছিল ।” কিন্তু মহেন্দ্রের ব্যবহারে রাগের লক্ষণ কিছুই দেখা গেল না । সে অনেকক্ষণ কিছু না বলিয়া আশার মুখ বুকের উপর রাখিল এবং বারংবার অঙ্গুলি দিয়া তাহার চুল চিরিতে চিরিতে তাহার খোপা শিথিল করিয়া দিল। পূর্বে আদরের দিনে মহেন্দ্র এমন করিয়া আশার বাধা চুল খুলিয়া দিত— আশা তাহাতে আপত্তি করিত। আজ আর সে তাহাতে কোনো আপত্তি না করিয়া পুলকে বিহ্বল হইয়া চুপ করিয়া রহিল। হঠাৎ এক সময় তাহার ললাটের উপর অশ্রুবিন্দু পড়িল, এবং মহেন্দ্র তাহার মুখ তুলিয়া ধরিয়া স্নেহরুদ্ধ স্বরে ডাকিল, “চুনি।" আশা কথায় তাহার কোনো উত্তর না দিয়া দুই কোমল হস্তে মহেন্দ্রকে চাপিয়া ধরিল । মহেন্দ্ৰ কহিল, "অপরা করিয়াছি, আমাকে মাপ করে ।” 革