পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

જ রবীন্দ্র-রচনাবলী । সেই এসেলের গন্ধ চিঠির কাগজ হইতে উতলা দীর্ঘনিশ্বাসের মতো মহেঞ্জের হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করিল। * ভাজ খুলিয়া মহেন্দ্র চিঠি পড়িল । কিন্তু এ কী । যেমন বঁাকাচোরা লাইন, তেমন সাদাসিধা ভাষা নয় তো । কাচ-কাচা অক্ষর, কিন্তু কথাগুলি তো তাহার সঙ্গে মিলিল না । লেখা আছে— প্রিয়তম, যাহাকে ভুলিবার জন্য চলিয়া গেছ, এ লেখায় তাহাকে স্মরণ করাইয়া দিব কেন । যে লতাকে ছিড়িয়া মাটিতে ফেলিয়া দিলে, সে আবার কোন লজ্জায় জড়াইয়া উপরে উঠতে চেষ্টা করে । সে কেন মাটির সঙ্গে মাটি হইয়া মিশিয়া গেল না । zš কিন্তু এটুকুতে তোমার কী ক্ষতি হইবে, নাথ । না হয় ক্ষণকালের জন্য মনে পড়িলই বা । মনে তাহাতে কতটুকুই বা বাজিবে। আর, তোমার অবহেলা ষে কাটার মতো আমার পাজরের ভিতরে প্রবেশ করিয়া রহিল । সকল দিন, সকল রাত, সকল কাজ, সকল চিস্তার মধ্যে যেদিকে ফিরি, সেই দিকেই যে আমাকে বিধিতে লাগিল । তুমি যেমন করিয়া ভুলিলে, আমাকে তেমনি করিয়া ভুলিবার একটা উপায় বলিয়া দাও । নাথ, তুমি যে আমাকে ভালোবাসিয়াছিলে, সে কি আমারই অপরাধ । আমি কি স্বপ্নেও এত সৌভাগ্য প্রত্যাশা করিয়াছিলাম। আমি কোথা হইতে আসিলাম, আমাকে কে জানিত । আমাকে যদি না চাহিয়া দেখিতে, আমাকে যদি তোমার ঘরে বিনা-বেতনের দাসী হইয়া থাকিতে হইত, আমি কি তোমাকে কোনো দোষ দিতে পারিতাম। তুমি নিজেই আমার কোন গুণে ভুলিলে প্রিয়তম, কী দেখিয়া আমার এত অাদর বাড়াইলে । আর, আজি বিনা-মেঘে যদি বজ্রপাতই হইল, তবে সে বঞ্জ কেবল দগ্ধ করিল কেন । একেবারে দেহমন কেন ছাই করিয়া দিল না । এই দুটো দিনে অনেক সহ করিলাম, অনেক ভাবিলাম, কিন্তু, একটা কথা বুঝিতে পারিলাম না— ঘরে থাকিয়াও কি তুমি আমাকে ফেলিতে পারিতে না । আমার জন্যও কি তোমার ঘর ছাড়িয়া যাওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল । আমি কি তোমার এতখানি জুড়িয়া আছি। আমাকে তোমার ঘরের কোণে, তোমার দ্বারের বাহিরে ফেলিয়া রাখিলেও কি আমি তোমার চোখে পড়িতাম । তাই যদি হয়, তুমি কেন গেলে, আমার কি কোথাও যাইবার পথ ছিল না । ভাসিয়া আসিয়াছি, ভাসিয়া যাইতাম।—