পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি CX9S পারিল না, কেবল তাহার হৃদয় বিগলিত হইয়া অশ্রু পড়িতে লাগিল। আজই সন্ধ্যাবেলায় বিনোদিনী তাহাকে অকারণ স্নেহাতিশষ্যে যে-সব কথা বলিয়াছিল, তাহা মনে পড়িল । উভয়ের মধ্যে কোথাও কোনো যোগ আছে কি না, তাহ সে কিছুই বুঝিল না । কিন্তু মনে হইল, যেন ইহা তাহার জীবনে কিসের একটা সূচনা। ভালো কি মন্দ কে জানে । ভয়ব্যাকুলচিত্তে সে মহেন্দ্রকে বান্থপাশে বদ্ধ করিল। মহেন্দ্র তাহার সেই অকারণ আশঙ্কার আবেশ অনুভব করিতে পারিল । কহিল, "চুনি, তোমার উপর তোমার পুণ্যবতী মাসিমার আশীর্বাদ আছে, তোমার কোনো ভয় নাই, কোনো ভয় নাই । তিনি তোমারই মঙ্গলের জন্য র্তাহার সমস্ত ত্যাগ করিয়া গেছেন, তোমার কখনো কোনো অকল্যাণ হইতে পারে না।” আশা তখন দৃঢ়চিত্তে সমস্ত ভয় দূর করিয়া ফেলিল। স্বামীর এই আশীৰ্বাদ অক্ষয়কবচের মতো গ্রহণ করিল। সে মনে মনে বারংবার তাহার মাসিমার পবিত্র পদধূলি মাথায় তুলিয়া লইতে লাগিল, এবং একাগ্রমনে কহিল, “মা, তোমার আশীৰ্বাদ আমার স্বামীকে সর্বদা রক্ষা করুক।” পরদিনে মহেন্দ্র চলিয়া গেল, বিনোদিনীকে কিছুই বলিয়া গেল না। বিনোদিনী মনে মনে কহিল, “নিজে অন্যায় করা হইল, আবার আমার উপরে রাগ | এমন সাধু তো দেখি নাই। কিন্তু এমন সাধুত্ব বেশিদিন টেকে না।” २९ সংসারত্যাগিনী অন্নপূর্ণ বহুদিন পরে হঠাৎ মহেন্দ্রকে আসিতে দেখিয়া যেমন স্নেহে আনন্দে আপ্লুত হইয়া গেলেন, তেমনি তাহার হঠাৎ ভয় হইল, বুঝি আশাকে লইয়া মার সঙ্গে মহেক্সের আবার কোনো বিরোধ ঘটিয়াছে এবং মহেন্দ্র তাহার কাছে নালিশ জানাইয়া সাস্তুনালাভ করিতে আসিয়াছে । মহেন্দ্র শিশুকাল হইতেই সকল প্রকার সংকট ও সস্তাপের সময় তাহার কাকীর কাছে ছুটিয়া আসে । কাহারও উপর রাগ করিলে অন্নপূর্ণ তাহার রাগ থামাইয়া দিয়াছেন, দুঃখবোধ করিলে তাহা সহজে সহ করিতে উপদেশ দিয়াছেন। কিন্তু বিবাহের পর হইতে মহেন্দ্রের জীবনে সর্বাপেক্ষা যে সংকটের কারণ ঘটিয়াছে, তাহার প্রতিকারচেষ্টা দূরে থাক, কোনোপ্রকার সাত্বনা পর্যন্ত তিনি দিতে অক্ষম । সে-সম্বন্ধে যে-ভাবে যেমন করিয়াই তিনি