পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭২ ৷ রবীন্দ্র-রচনাবলী কোনো উত্তর না দিয়া চিঠি ফেরত পাঠাইয়াছে মনে করিয়া বিনোদিনীর সর্বাজের সমস্ত শিরা দব দব করিতে লাগিল। যে দরোয়ান চিঠি লইয়া গিয়াছিল, তাহাকে ভাকিয়া পাঠাইল ; সে অন্য কাজে অনুপস্থিত ছিল, তাহাকে পাওয়া গেল না । প্রদীপের মুখ হইতে যেমন জলন্ত তৈলবিন্দু ক্ষরিয়া পড়ে, রুদ্ধ শয়নকক্ষের মধ্যে বিনোদিনীর দীপ্ত নেত্র হইতে তেমনি হৃদয়ের জালা অশ্রুজলে গলিয়া পড়িতে লাগিল । নিজের চিঠিখানা ছিড়িয়া ছিড়িয়া কুটিকুটি করিয়া কিছুতেই তাহার সাত্বনা হইল না— সেই দুই-চারি লাইন কালির দাগকে অতীত হইতে বর্তমান হইতে একেবারেই মুছিয়া ফেলিবার, একেবারেই না করিয়া দিবার কোনো উপায় নাই কেন । ক্রুদ্ধা মধুকরী যাহাকে সম্মুখে পায় তাহাকেই দংশন করে, ক্ষুন্ধা বিনোদিনী তেমনি তাহার চারিদিকের সমস্ত সংসারটাকে জালাইৰার জন্য প্রস্তুত হইল । সে যাহা চায় তাহাতেই বাধা ? কোনো কিছুতেই কি সে কৃতকার্য হইতে পারিবে না। স্থখ যদি না পাইল, তবে যাহারা তাহার সকল সুখের অন্তরায়, যাহারা তাহাকে কৃতার্থতা হইতে ভ্ৰষ্ট, সমস্ত সম্ভবপর সম্পদ হইতে বঞ্চিত করিয়াছে, তাহাদিগকে পরাস্ত খুলিলুষ্ঠিত করিলেই তাহার ব্যর্থ জীবনের কর্ম সমাধা হইবে । ३8 সেদিন নুতন ফান্ধনে প্রথম বসন্তের হাওয়া দিতেই আশা অনেক দিন পরে সন্ধ্যার আরম্ভে ছাদে মাকুর পাতিয়া বসিয়াছে । একখানি মাসিক কাগজ লইয়া খণ্ডশ প্রকাশিত একটা গল্প খুব মনোযোগ দিয়া সেই অল্প আলোকে পড়িতেছিল । গল্পের নায়ক তখন সংবৎসর পরে পূজার ছুটিতে বাড়ি আসিবার সময় ডাকাতের হাতে পড়িয়াছে, আশার হৃদয় উদবেগে কঁাপিতেছিল ; এদিকে হতভাগিনী নায়িকা ঠিক সেই সময়েই বিপদের স্বপ্ন দেখিয়া কাদিয়া জাগিয়া উঠিয়াছে। আশা চোখের জল আর রাখিতে পারে না । আশা বাংলা গল্পের অত্যস্ত উদার সমালোচক ছিল । যাহা পড়িত, তাহাই মনে হইত চমৎকার । বিনোদিনীকে ডাকিয়া বলিত, ভাই চোখের বালি, মাথা খাও, এ-গল্পটা পড়িয়া দেখো । এমন স্বন্দর । পড়িয়া আর কাদিয়া বাচি না।” বিনোদিনী ভালোমন্দ বিচার করিয়া আশার উচ্ছসিত উৎসাহে বড়ো আঘাত করিত । আজিকার এই গল্পটা আশা মহেক্সকে পড়াইবে বলিয়া স্থির করিয়া যখন সজলচক্ষে কাগজখানা বন্ধ করিল, এমন সময় মহেক্স আসিয়া উপস্থিত হুইল। মহেক্সের মূখ