পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

द्रवैौटश-ब्रध्मांयलौ | جمنا8 বিনোদিনী এইরূপ শনিগ্রহের মতো ঘুরিতে এবং মহেক্সকে ঘুরাইতে লাগিল— কোথাও তাহাকে বিশ্রাম দিল না । বিনোদিনী অতি শীঘ্রই লোককে আপন করিয়া লইতে পারে ; অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সে গাড়ির সহযাত্ৰিণীদের সহিত বন্ধুত্বস্থাপন করিয়া লইত। যেখানে যাইবার ইচ্ছা, সেখানকার সমস্ত খবর লইত— যাত্রিশালায় আশ্রয় লইত এবং যেখানে যাহা-কিছু দেখিবার আছে, ঘুরিয়া-ঘূরিয়া বন্ধুসহায়ে দেখিয়া লইত । মহেন্দ্র বিনোদিনীর কাছে নিজের অনাবশ্যকতায় প্রতিদিন আপনাকে হুতমান বোধ করিতে লাগিল । টিকিট কিনিয়া দেওয়া ছাড়া তাহার কোনো কাজ ছিল না, বাকি সময়টা তাহার প্রবৃত্তি তাহাকে ও সে আপন প্রবৃত্তিকে দংশন করিতে থাকিত। প্রথম প্রথম কিছুদিন সে বিনোদিনীর সঙ্গে সঙ্গে পথে পথে ফিরিয়াছিল— কিন্তু ক্রমে তাহা অসহ্য হইয়া উঠিল ; তখন মহেন্দ্র আহারাদি করিয়া ঘুমাইবার চেষ্টা করিত, বিনোদিনী সমস্ত দিন ঘুরিয়া বেড়াইত। মাতৃস্নেহলালিত মহেন্দ্র যে এমন করিয়া পথে বাহির হইয়া পড়িতে পারে, তাহ কেহ কল্পনাও করিতে পারিত না । 喻 একদিন এলাহাবাদ স্টেশনে দুই জনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করিতেছিল । কোনো আকস্মিক কারণে ট্রেন আসিতে বিলম্ব হইতেছে । ইতিমধ্যে অন্যান্ত । গাড়ি যত আসিতেছে ও যাইতেছে, বিনোদিনী তাহার যাত্রীদের ভালো করিয়া নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতেছে। পশ্চিমে ঘুরিতে ঘুরিতে চারিদিকে চাহিয়া দেখিতে দেখিতে সে হঠাৎ কাহারও দেখা পাইবে, এই বোধ করি তাহার আশা । অন্তত, রুদ্ধ গলির মধ্যে জনহীন গৃহে নিশ্চল উদ্যমে নিজেকে প্রত্যহ চাপিয়া মারার চেয়ে এই নিত্যসন্ধানপরতার মধ্যে, এই উন্মুক্ত পথের জনকোলাহলের মধ্যে শাস্তি আছে । হঠাৎ এক সময়ে স্টেশনে একটি কাচের বাক্সের উপর বিনোদিনীর দৃষ্টি পড়িতেই সে চমকিয়া উঠিল । এই পোস্ট আপিসের বাক্সের মধ্যে, যে-সকল লোকের উদেশ পাওয়া যায় নাই তাহাদের পত্র প্রদর্শিত হইয়া থাকে। সেই বাক্সে সজ্জিত একখানি পত্রের উপরে বিনোদিনী বিহারীর নাম দেখিতে পাইল । বিহারীলাল নামটি অসাধারণ নহে— পত্রের বিহারীই যে বিনোদিনীর অভীষ্ঠ বিহারী, এ-কথা মনে করিবার কোনো হেতু ছিল না— তবু বিহারীর পুৱা নাম দেখিয়া সেই একটিমাত্র বিহারী ছাড়া জার-কোনো বিহারীর কথা তাহার মনে সন্দেহ হইল না। পত্রে লিখিত ঠিকানাটি সে মুখস্থ করিয়া লইল । অত্যন্ত অপ্রসন্নমুখে মহেন্দ্র একটা বেঞ্চের উপর বলিয়া ছিল, বিনোদিনী সেখানে আসিয়া কছিল, “কিছুদিন এলাহাবাদেই থাকিৰ ।”