পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আত্মশক্তি t'లిపి দিকে ছুটিয়া চলিয়াছে বলিয়। আমরা আক্ষেপ করি— কিন্তু দেশের হৃদয় যদি যায়, দেশের সহিত যতকিছু কল্যাণসম্বন্ধ একে একে সমস্তই যদি বিদেশী গবর্ষেন্টরই করায়ত্ত হয়, আমাদের আর কিছুই অবশিষ্ট না থাকে, তবে সেটা কি বিদেশগামী টাকার স্রোতের চেয়ে অল্প আক্ষেপের বিষয় হইবে । এইজন্তই কি আমরা সভা করি, দরখাস্ত করি, ও এইরূপে দেশকে অস্তরে বাহিরে সম্পূর্ণভাবে পরের হাতে তুলিয়া দিবার চেষ্টাকেই বলে দেশহিতৈষিতা ? ইহা কদাচই হইতে পারে না । ইহা কখনোই চিরদিন এ-দেশে প্রশ্রয় পাইবে না— কারণ, ইহা ভারতবর্ষের ধর্ম নহে । আমরা আমাদের অতিদূরসম্পৰ্কীয় নিঃস্ব আত্মীয়দিগকেও পরের ভিক্ষার প্রত্যাশী করিয়া দুরে রাখি নাই— তাহাদিগকেও নিজের সন্তানদের সহিত সমান স্থান দিয়াছি ; আমাদের বহুকষ্ট-অজিত অল্পও বহুদূর-কুটুম্বদের সহিত ভাগ করিয়া খাওয়াকে আমরা এক দিনের জন্যও অসামান্য ব্যাপার বলিয়া কল্পনা করি নাই— আর আমরা বলিব, আমাদের জননী জন্মভূমির ভার আমরা বহন করিতে পারিব না ? বিদেশী চিরদিন আমাদের স্বদেশকে অন্নজল ও বিদ্যা ভিক্ষা দিবে, আমাদের কর্তব্য কেবল এই যে, ভিক্ষার অংশ মনের মতো না হইলেই আমরা চীৎকার করিতে থাকিব ? কদাচ নহে, কদাচ নহে ! স্বদেশের ভার আমরা প্রত্যেকেই এবং প্রতিদিনই গ্রহণ করিব— তাহাতে আমাদের গৌরব, আমাদের ধর্ম। এইবার সময় আসিয়াছে যখন আমাদের সমাজ একটি স্ববৃহৎ স্বদেশী সমাজ হইয়া উঠিবে । সময় আসিয়াছে যখন প্রত্যেকে জানিবে আমি একক নহি— আমি ক্ষুদ্র হইলেও আমাকে কেহ ত্যাগ করিতে পারিবে না এবং ক্ষুদ্রতমকেও আমি ত্যাগ করিতে পারিব না । তর্ক এই উঠিতে পারে যে, ব্যক্তিগত হৃদয়ের সম্বন্ধ দ্বারা খুব বড়ো জায়গা ব্যাপ্ত করা সম্ভবপর হইতে পারে না । একটা ছোটো পল্লীকেই আমরা প্রত্যক্ষভাবে আপনার করিয়া লইয়া তাহার সমস্ত দায়িত্ব স্বীকার করিতে পারি— কিন্তু পরিধি বিস্তীর্ণ করিলেই কলের দরকার হয়— দেশকে আমরা কখনোই পল্লীর মতো করিয়া দেখিতে পারি না—এইজন্য অব্যবহিত ভাবে দেশের কাজ করা যায় না, কলের সাহায্যে করিতে হয় । এই কল-জিনিসটা আমাদের ছিল না, স্বতরাং ইহা বিদেশ হইতে আনাইতে হুইবে এবং কারখানা-ঘরের সমস্ত সাজসরঞ্জাম-আইনকামুন গ্রহণ ন করিলে কল চলিবে না । কথাটা অসংগত নহে । কল পাতিতেই হইবে । এবং কলের নিয়ম যে-দেশী হউক না কেন, তাহ মানিয়া না লইলে সমস্তই ব্যর্থ হইবে। এ-কথা সম্পূর্ণ স্বীকার করিয়াও বলিতে হইবে, শুধু কলে ভারতবর্ষ চলিবে না— যেখানে আমাদের ব্যক্তিগত