পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(t Երեր রবীন্দ্র-রচনাবলী আমাদের তরুণাবস্থা বলিলে ষে অত্যন্ত স্থদুরকালের কথা বোঝায়, এভবড়ে প্রাচীনত্বের দাবি আমি করিতে পারি না— কিন্তু, আমাদের তখনকার দিনের সঙ্গে এখনকার দিনের এমন একটা পরিবর্তন দেখিতে পাই যে, সেই অদূরবর্তী সময়কে ধেন একটা যুগান্তর বলিয়া মনে হয়। এই পরিবর্তনটা বয়সের দোষে আমি দেখিতেছি অথবা এই পরিবর্তনটা সত্যই ঘটয়াছে, তাহা ভাবিবার বিষয়। একটু বয়স বেশি হইলেই প্রাচীনতর লোকেরা তাহাদের সেকালের সঙ্গে তুলনা করিয়া একালকে খোটা দিতে বসেন – তাহার একটা কারণ, সেকাল তাহাজের অfশা করিবার কাল ছিল এবং একালট। তাহাদের হিসাব বুঝিবার দিন । তাহারা ভুলিয়া যান, একালের যুবকেরাও আশা করিয়া জীবন আরম্ভ করিতেছে, এখনো তাহারা চশমা চোখে হিসাব মিটাইতে বসে নাই । অতএব, আমাদের সেদিনকার কালের সঙ্গে অন্তকার কালের যে প্রভেদটা আমি দেখিতেছি তাহা যথার্থ কি না, তাহার বিচারক একা আমি নহি, তোমাদিগকেও তাহা বিচার করিয়া দেখিতে হইবে । সত্যমিথ্যা নিশ্চয় জানি না, কিন্তু মনে হয়, এখনকার ছেলেদের চেয়ে তখন আমরা অনেক বেশি ছেলেমানুষ ছিলাম। সেটা ভালো কি মন্দ তাহার দুই পক্ষেই বলিবার কথা আছে— কিন্তু, ছেলেমানুষ থাকিবার একটা গুণ ছিল যে, আমাদের আশার অস্ত ছিল না, ভবিষ্যতের দিকে কী চোখে যে চাহিতাম, কিছুই অসাধ্য এবং অসম্ভব বলিয়া মনে হইত না । তখন আমরা এমন-সকল সভা করিয়াছিলাম, এমন-সকল দল বধিয়াছিলাম, এমন-সকল সংকল্পে বদ্ধ হইয়াছিলাম যাহা এখনকার দিনে তোমরা শুনিলে নিশ্চয় হাস্যসংবরণ করিতে পারিবে না— এবং আমাদের সাহিত্যে কোনো কোনো স্থলে আমাদের সেদিনকার চিত্র হাস্যরসরঞ্জিত তুলিকায় চিত্রিত হইয়াছে বলিয়া অামার বিশ্বাস । কিন্তু, সব কথা যদি খুলিয়া বলি তবে তোমরা এই মনে করিয়া বিস্মিত হইবে যে, আমাদের সেকালে আমরা, বালকেরা, সকলেই যে একবয়সী ছিলাম তাহা নহে, আমাদের মধ্যে পঙ্ককেশের অভাব ছিল না এবং তাহীদের আশ ও উৎসাহ আমাদের চেয়ে যে কিছুমাত্র অল্প ছিল, তাহাও বলিতে পারি না। তখন আমরা নবীনে-প্রবীপে মিলিয়া ভয়-লঙ্গা-নৈরাশু কেমন নিঃশেষে বিসর্জন দিয়াছিলাম, তাহ আজও ভুলিতে পারিব না । সেদিনের চেয়ে নিঃসন্দেহই আজ আমরা অনেক বিষয়ে অগ্রসর হইয়াছি, কিন্তু আজ আকাশে আশার আলোক যেন মান এবং পথিকের হস্তে আনন্দের পাথেয় যেন অপ্রচুর।