পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী . وہ وف ইংরেজ রাজ সাহস করে না । ইহার প্রার্থনা পূরণ করিলেই ইহার শক্তির স্পৰ্ধাকে লালন করা হয় – এইজন্য ইংরেজ-রাজনীতি আড়ম্বরসহকারে ইহার প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করিয়া ইহার গর্বকে খর্ব করিয়া রাখিতে চান । এমন অবস্থায় এই সকল পোলিটিকাল সভা কৃতকার্যতার বল লাভ করিতে পারে না ; একত্র হইবার যে শক্তি তাহা ক্ষণকালের জন্য পায় বটে, কিন্তু সেই শক্তিকে একটা যথার্থ সার্থকতার দিকে প্রয়োগ করিবার যে ক্ষতি, তাহা পায় না। স্বতরাং নিফল চেষ্টায় প্রবৃত্ত শক্তি, ডিম্ব হইতে অকালে জাত অরুণের মতো পঙ্গু হইয়াই থাকে— সে কেবল রথেই জোড়া থাকিবার উমেদার হইয়া থাকে, তাহার নিজের উড়িবার কোনো উদ্যম থাকে না । কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ভারতবর্ষের পলিটিক্সে অবিশ্বাসনীতি রাজার তরফে অত্যন্ত স্থদুঢ়, অথচ আমাদের তরফে তাহ একান্ত শিথিল । আমরা একই কালে অবিশ্বাস প্রকাশ করি, কিন্তু বিশ্বাসের বন্ধন ছেদন করি না । ইহাকেই বলে ওরিয়েন্টাল,— এইখানেই পাশ্চাত্ত্যদের সঙ্গে আমাদের প্রভেদ । যুরোপ কায়মনোবাক্যে অবিশ্বাস করিতে জানে— আর, ষোলো-আনা অবিশ্বাসকে জাগাইয়া রাখিবার যে কঠিন শক্তি তাহা আমাদের নাই, আমরা ভুলিয়া নিশ্চিস্ত হইতে চাই, আমরা কোনোক্রমে বিশ্বাস করিতে পারিলে বাচি । যাহা অনাবশ্যক তাহাকেও রক্ষা করিবার, যাহা অপ্রদ্ধেয় তাহাকেও গ্রহণ করিবার, যাহা প্রতিকুল তাহাকেও অঙ্গীভূত করিবার জন্য আমরা চিরদিন প্রস্তুত হইয়া আছি । যুরোপ যাহা কিছু পাইয়াছে তাহ বিরোধ করিয়াই পাইয়াছে, আমাদের স্বাহকিছু সম্পত্তি তাহা বিশ্বাসের ধন । এখন বিরোধপরায়ণ জাতির সহিত বিশ্বাসপরায়ণ জাতির বোঝাপড়া মুশকিল হইয়াছে । স্বভাববিদ্রোহী স্বভাববিশ্বাসীকে শ্রদ্ধাই করে না । যাহাই হউক, চিরন্তন প্রকৃতিবশত আমাদের ব্যবহারে যাহাই প্রকাশ পাউক, ইংরেজ রাজা স্বভাবতই যে আমাদের ঐক্যের সহায় নহেন, আমাদের ক্ষমতালাভের অমুকুল নহেন, এ-কথা আমাদের মনকে অধিকার করিয়াছে। সেইজন্তই য়ুনিভার্সিটি সংশোধন, বঙ্গব্যবচ্ছেদ প্রভৃতি গবর্মেন্টের ব্যবস্থাগুলিকে আমাদের শক্তি খর্ব করিবার সংকল্প বলিয়া কল্পনা করিয়াছি । এমনতরো সন্দিগ্ধ অবস্থার স্বাভাবিক গতি হওয়া উচিত— আমাদের স্বদেশহিতকর সমস্ত চেষ্টাকে নিজের দিকে ফিরাইয়া আনা । আমাদের অবিশ্বাসের মধ্যে এইটুকুই আমাদের লাভের বিষয়। পরের নিকট আমাদের সমস্ত প্রত্যাশাকে বদ্ধ করিয়া রাখিলে কেবল ষে ফল পাওয়া যায় না, তাহা নহে, তাহাতে আমাদের ঈশ্বরপ্রদত্ত