পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আত্মশক্তি ఆసిరి করিবার দিন আজ নহে— সন্তান যখন দীর্ঘকাল রোগশয্যায় শায়িত তখন জননী বেনারসি শাড়িখানা বেচিয়া তাহার চিকিৎসার ব্যবস্থা করিতে কুষ্ঠিত হন না— তখন কোথায় থাকে সৌন্দর্যবোধের দাবি ? জানি, আমাকে অনেকে বলিবেন, কথাটা বলিতে যত সহজ করিতে তত সহজ নহে । আমাদের অভ্যাস, আমাদের সংস্কার, আমাদের আরামস্থহ, আমাদের সৌন্দর্যবোধ— ইহাদিগকে ঠেলিয়া নড়ানো বড়ো কম কথা নহে। নিশ্চয়ই তাহা নহে। ইহা সহজ নহে, ইহার চেয়ে একদিনের মতো চাদার খাতায় সহি দেওয়া সহজ । কিন্তু বড়ো কাজ সহজে হয় না। যখন সময় আসে তখন ধর্মের শঙ্খ বাজিয়া উঠে, তখন যাহা কঠিন তাহাকেই বরণ করিয়া লইতে হয় । বস্তুত, তাহাতেই আনন্দ,—সহজ নহে বলিয়াই আনন্দ, দুঃসাধ্য বলিয়াই মুখ । আমরা ইতিহাসে পড়িয়াছি, যুদ্ধের সময় রাজপুত মহিলারা অঙ্গের ভূষণ, মাথার কেশ দান করিয়াছে ; তখন স্থবিধা বা সৌন্দর্যচর্চার কথা ভাবে নাই—ইহা হইতে আমরা এই শিখিয়াছি যে, জগতে স্ত্রীলোক যদি বা যুদ্ধ না করিয়া থাকে, ত্যাগ করিয়াছে ; সময় উপস্থিত হইলে ভূষণ হইতে প্রাণ পর্যন্ত ত্যাগ করিতে কুষ্ঠিত হয় নাই। কর্মের বীর্ষ অপেক্ষা ত্যাগের বীর্ষ কোনো অংশেই নূ্যন নহে। ইহা যখন ভাবি তখন মনে এই গৌরব জন্মে যে, এই বিচিত্রশক্তিচালিত সংসারে স্ত্রীলোককে লজ্জিত হইতে হয় নাই ; স্ত্রীলোক কেবল সৌন্দর্য দ্বারা মনোহরণ করে নাই, ত্যাগের দ্বারা শক্তি দেখাইয়াছে । আজ আমাদের বঙ্গদেশ রাজশক্তির নির্দয় আঘাতে বিক্ষত হইয়াছে, আজ বঙ্গরমণীদের ত্যাগের দিন। আজ আমরা ব্রতগ্রহণ করিব। আজ আমরা কোনো ক্লেশকে ডরিব না, উপহাসকে অগ্রাহ করিব, আজ আমরা পীড়িত জননীর রোগশয্যায় বিলাতের সাজ পরিয়া শৌখিনতা করিতে যাইব না। দেশের জিনিসকে রক্ষা করা, এও তো রমণীর একটা বিশেষ কাজ । আমরা ভালোবাসিতে জানি । ভালোবাসা চাকচিক্যে ভুলিয়া নূতনের কুহকে চারিদিকে ধাবমান হয় না। আমাদের যাহা অাপন, সে স্বত্র হউক আর কুত্ৰ হউক, নারীর কাছে অনাদর পায় না— সংসার তাই রক্ষা পাইতেছে । একবার ভাবিয়া দেখুন, আজ যে বঙ্গসাহিত্য বলিষ্ঠভাবে অসংকোচে মাথা তুলিতে পারিয়াছে, একদিন শিক্ষিত পুরুষসমাজে ইহার অবজ্ঞার সীমা ছিল না। তখন পুরুষের বাংলা বই কিনিয়া লজ্জার সহিত কৈফিয়ত দিতেন যে, আমরা পড়িব না, বাড়ির ভিতরে মেয়েরা পড়িবে। আচ্ছা আচ্ছ, তাহাদের সে-লজার ভার আমরাই বহন