পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১২ রবীন্দ্র-রচনাবলী এই পরিবারে তাহার স্বামী যে আপন প্রতিষ্ঠা হারাইয়াছে তাহার মূল কারণ মধু। এইজন্য ক্ষণে ক্ষণে কেমন করিয়া সেই মধুর কথা অত্যন্ত তীব্র হইয়া কিরণের মুখে আসিরা পড়ে। মধুর ষে হাড়ে হাড়ে বজ্জাতি, সে যে শয়তানের অগ্রগণ্য, এবং মধুকে দয়া করাটা ধে নিতান্তই একটা ঠকা, এ কথা বার বার বিস্তারিত করিয়াও কিছুতে তাহার শান্তি হয় না । বনোয়ারি প্রথম দুই-একদিন প্রতিবাদের চেষ্টা করিয়া কিরণের উত্তেজনা প্রবল করিয়া তুলিয়াছিল, তাহার পর হইতে সে কিছুমাত্র প্রতিবাদ করে না। এমনি করিয়া বনোয়ারি তাহার নিয়মিত গৃহধর্ম রক্ষা করিতেছে ; কিরণ ইহাতে কোনো অভাব-অসম্পূর্ণতা অনুভব করে না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে বনোয়ারির জীবনট বিবর্ণ, বিরস এবং চির-অভূক্ত । এমন সময় জানা গেল, বাড়ির ছোটে। বউ, বংশীর স্ত্রী গfভণী । সমস্ত পরিবার আশায় উৎফুল্প হইয়া উঠিল। কিরণের দ্বারা এই মছদবংশের প্রতি যে কর্তব্যের ক্রটি হইয়াছিল, এতদিন পরে তাহ পূরণের সম্ভাবনা দেখা যাইতেছে ; এখন যাঁর রূপায় কন্যা না হইয়া পুত্র হইলে রক্ষা । পুত্রই জন্মিল । ছোটোবাবু কলেজের পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ, বংশের পরীক্ষাতেও প্রথম মার্ক পাইল। তাহার আদর উত্তরোত্তর বাডিয়া উঠতেছিল, এখন তাহার অাদরের সীমা রহিল না । সকলে মিলিয়া এই ছেলেটকে লষ্টয় পড়িল । কিরণ তে তাহকে এক মুহূর্ত কোল হইতে নামাইতে চায় না। তাহার এমন অবস্থা যে, মধুকৈবর্তের স্ব ভাবের কুটিলতার কথা ও সে প্রায় বিস্তৃত হইবার জে হইল । বনোয়ারির ছেলে-ভালোবাসা অত্যস্ত প্রবল। যাহা কিছু ছোটো, অক্ষম, স্বকুমার, তাহার প্রতি তাহার গভীর স্নেহ এবং করুণ। সকল মানুষেরই প্রকৃতির মধ্যে বিধাতা এমন একটা-কিছু দেন যাহা তাহার প্রকৃতিবিরুদ্ধ ; নঙ্গিলে বনোয়ারি যে কেমন করিয়া পাথি শিকার করিতে পারে বোঝা যায় না। কিরণের কোলে একটি শিশুর উদয় দেখিবে, এই ইচ্ছা বনোয়ারির মনে বহুকাল হষ্টতে অতৃপ্ত হইয়া আছে। এইজন্য বংশীর ছেলে হইলে প্রথমটা তাহার মনে একটু ঈর্ষার বেদন জন্মিয়াছিল, কিন্তু সেটাকে দূর করিয়া দিতে তাহার বিলম্ব হয় নাই। এই শিশুটিকে বনোয়ারি খুবই ভালোবাসিতে পারিত, কিন্তু ব্যাঘাতের কারণ হইল এই যে, যত দিন যাইতে লাগিল কিরণ তাহাকে লইয়া অভ্যস্ত বেশি ব্যাপৃত হইয় পড়িল । স্ত্রীর । সঙ্গে বনোয়ারির মিলনে বিস্তর ফাক পড়িতে লাগিল। বনোয়ারি স্পষ্টই বুঝিতে পারিল, এতদিন পরে কিরণ এমন একটা কিছু পাইয়াছে যাহা তাহার হৃদয়কে সত্যসত্যই পূর্ণ