পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ २७> কিন্তু মৃত্যুর বঁাশি বাজতে লাগল— কোথায় রে রাজমিস্ত্রির গড় দেয়াল, কোথায় রে তোমাদের ঘোরে। আইন দিয়ে গড়া কাটার বেড়া ; কোন দুঃখে কোন অপমানে মাহুষকে বন্দী করে রেখে দিতে পারে! ঐ তো মৃত্যুর হাতে জীবনের জয়পতাকা উড়ছে ! ওরে মেজেবিউ, ভয় নেই তোর ! তোর মেজোবউয়ের খোলস ছিন্ন হতে এক নিমেষও লাগে না । তোমাদের গলিকে আর আমি ভয় করি নে। আমার সমুখে আজ নীল সমুদ্র, আমার মাথার উপরে আষাঢ়ের মেঘপুঞ্জ । তোমাদের অভ্যাসের অন্ধকারে আমাকে ঢেকে রেখে দিয়েছিলে । ক্ষণকালের জন্ত বিন্দু এসে সেই আৰরণের ছিদ্র দিয়ে আমাকে দেখে নিয়েছিল। সেই মেয়েটাই তার আপনার মৃত্যু দিয়ে আমার আবরণখান আগাগোড়া ছিন্ন করে দিয়ে গেল। আজ বাইরে এসে দেখি, আমার গৌরব রাখবার আর জায়গা নেই। আমার এই অনাদৃত রূপ যার চোখে ভালো লেগেছে, সেই স্বন্দর সমস্ত আকাশ দিয়ে আমাকে চেয়ে দেখছেন । এইবার মরেছে মেজেবিউ । তুমি ভাৰছ আমি মরতে যাচ্ছি— ভয় নেই, অমন পুরোনো ঠাট্টা তোমাদের সঙ্গে আমি করব না। মীরাবাঈ ও তো আমারই মতো মেয়েমানুষ ছিল— তার শিকলও তো কম ভারি ছিল না, তাকে তো বঁচিবার জন্যে মরতে হয় নি। মীরাবাঈ তার গানে বলেছিল, ‘ছাডুক বাপ, ছাডুক মা, ছাডুক ষে যেখানে আছে, মীরা কিন্তু লেগেই রইল, প্রভূ— তাতে তার যা হবার তা হোক।’ এই লেগে থাকাই তো বেঁচে থাকা । আমিও বঁচিব । আমি বঁাচলুম। তোমাদের চরণতলাশ্রয়ছিন্ন— মৃণাল । শ্রাবণ, ১৩২১ उठी ইফে 计 শ্রাবণ মাসটা আজ যেন এক রাত্রে একেবারে দেউলে হইয়া গেছে। সমস্ত আকাশে কোথাও একটা ছেড়া মেঘের টুকরাও নাই । আশ্চর্য এই যে, আমার সকালটা আজ এমন করিয়া কাটিতেছে । আমার বাগানের মেহেদি-বেড়ার প্রাস্তে শিরীষগাছের পাতাগুল ঝলমল করিয়া উঠিতেছে, আমি তাহা তাকাইয়া দেখিতেছি। সর্বনাশের যে মাঝ-দরিয়ায় জাসিয়া পৌছিয়াছি এট যখন দূরে ছিল তখন ইহার কথা কল্পনা করিয়া কত শীতের রাত্রে সর্বাঙ্গে ঘাম দিয়াছে, কত