পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

80ty রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহলে বড়া হয় আমাদের অনাত্মীয়। মানুষ তাকে স্বনার ক’রে গ’ড়ে তুলল। জল বহনের জন্ত সৌন্দর্ধের কোনো অর্থই নেই। কিন্তু, এই শিল্পসৌন্দর্য প্রয়োজনের রূঢ়তার চারি দিকে ফঁাকা এনে দিল। যে-ঘড়াকে দায়ে পড়ে মেনেছিলেম, নিলেম তাকে আপন করে। মানুষের ইতিহাসে আদিম যুগ থেকেই এই চেষ্টা। প্রয়োজনের জিনিসকে সে অপ্রয়োজনের মূল্য দেয়, শিল্পকলার সাহায্যে বস্তুকে পরিণত করে বস্তুর অতীতে। সাহিত্যস্থষ্টি শিল্পস্থষ্টি সেই প্রলয়লোকে যেখানে দায় নেই, ভার নেই, যেখানে উপকরণ মায়া, তার ধ্যানরূপটাই সত্য, যেখানে মানুষ আপনাতে সমস্ত আত্মসাৎ ক’রে অাছে । কিন্তু, বস্তুকে দায়ে পড়ে মেনে নিয়ে তার কাছে মাথা হেঁট করা কাকে বলে যদি দেখতে চাও তবে ঐ দেখো কেরোসিনের টিনে ঘটস্থাপনা, বাকের দুই প্রাস্তে টিনের ক্যানেক্সা বেঁধে জল আনা । এতে অভাবের কাছেই মানুষের একান্ত পরাভব । বেমানুষ স্বন্দর করে ঘড়া ৰানিয়েছে সে-ব্যক্তি তাড়াতাড়ি জলপিপাসাকেই মেনে নেয় নি, সে যথেষ্ট সময় নিয়েছে নিজের ব্যক্তিত্বকে মানতে । বস্তুর পৃথিবী ধুলোমাটি পাথর লোহার ঠাসা হয়ে পিওঁীকৃত। বায়ুমণ্ডল তার চার দিকে বিরাট অবকাশ বিস্তার করেছে। এরই পরে তার আত্মপ্রকাশের ভূমিকা । এইখান থেকে প্রাণের নিশ্বাস বহমান ; সেই প্রাণ অনির্বচনীয় । সেই প্রাণশিল্পকারের তুলি এইখান থেকেই আলো নিয়ে, রঙ নিয়ে, তাপ নিয়ে, চলমান চিত্রে বারবার ভরে দিচ্ছে পৃথিবীর পট । এইখানে পৃথিবীর লীলার দিক, এইখানে তার স্বষ্টি ; এইখানে তার সেই ব্যক্তিরূপের প্রকাশ যাকে বিশ্লেষণ করা যায় না, ব্যাখ্যা করা যায় না ; যার মধ্যে তার বাণী, তার যাথার্থ্য, তার রস, তার শু্যামলতা, তার হিল্লোল। মাকুবও নানা জরুরি কাজের দায় পেরিয়ে চায় আপন আকাশমণ্ডল যেখানে তার অবকাশ, যেখানে বিনা প্রয়োজনের লীলায় আপন স্বষ্টিতে আপনাকে প্রকাশই তার চরম লক্ষ্য— ঘে-স্থষ্টিতে জানা নয়, পাওয়া নয়, কেবল হওয়া । পূর্বেই বলেছি, অঙ্কুভব মানেই হওয়া । বাহিরের সত্তার অভিঘাতে সেই হওয়ার বোধে বান ডেকে এলে মন স্থষ্টিলীলায় উদবেল হয়ে ওঠে। আমাদের হৃদয়বোধের কাজ আছে জীবিকানির্বাহের প্রয়োজনে । , আমরা আত্মরক্ষা করি, শক্র হনন করি, সস্তান পালন করি ; আমাদের হৃদয়বৃত্তি সেই-সকল কাজে বেগ সঞ্চার করে, অভিরুচি জাগায়। এই সীমাটুকুর মধ্যে জন্তুর সঙ্গে মাহুষের প্রভেদ নেই। প্রভেদ ঘটেছে সেইখানেই যেখানে মাহূব আপন হৃদয়াস্থস্থতিকে কর্মের দায় থেকে স্বতন্ত্ৰ ক’রে নিয়ে কল্পনার সঙ্গে যুক্ত ক’রে দেয়, যেখানে অনুভূতির রসটুকুই তার নিঃস্বার্থ উপভোগের লক্ষ্য, যেখানে আপন আয়ুষ্কৃতিৰে প্ৰকাশ