পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা 9ృ( ছিল। এই মৃত্যুই মমতাজের সব-চেয়ে বড়ো প্রেমের দান। তাজমহলে শাজাহানের শোক প্রকাশ পায় নি, তার আনন্দ রূপ ধরেছে।” অমিত বললে, “তোমার কথায় তুমি ক্ষণে ক্ষণে আমাকে চমক লাগিয়ে দিচ্ছ। তুমি *নিশ্চয়ই কবি ।” “আমি চাই নে কবি হতে ।” “কেন চাও না ?” “জীবনের উত্তাপে কেবল কথার প্রদীপ জালাতে আমার মন যায় না । জগতে যার উংসবসভা সাজাবার হুকুম পেয়েছে কথা তাদের পক্ষেই ভালো । আমার জীবনের তাপ জীবনের কাজের জন্যেই ।” “বন্যা, তুমি কথাকে অস্বীকার করছ? জান না, তোমার কথা আমাকে কেমন করে জাগিয়ে দেয়। তুমি কী করে জানবে তুমি কী বল, আর সে-বলার কী অর্থ। আবার দেখছি নিবারণ চক্রবর্তীকে ডাকতে হল । ওর নাম শুনে শুনে তুমি বিরক্ত হয়ে গেছ । কিন্তু কী করব বল, ওই লোকটা আমার মনের কথার ভাণ্ডারী। নিবারণ এপনও নিজের কাছে নিজে পুরোনো হয়ে যায় নি,--ও প্রত্যেক বারেই যে-কবিতা লেপে সে ওর প্রথম কবিতা । সেদিন ওর পাত ঘাটতে ঘাটতে অল্পদিন আ গেকার একটা লেপ পাওয়া গেল । ঝরনার উপরে কবিতা,-- কী করে পবর পেয়েছে শিলঙ পাহাড়ে এসে আমার ঝরন। আমি খুজে পেয়েছি - ও লিপছে— ঝরনা, তোমার স্ফটিক জলের স্বচ্ছ ধারা, তাহারি মাঝারে দেপে আপনারে স্বৰ্ষতারা । আমি নিজে যদি লিপতুম, এর চেয়ে স্পষ্টতর করে তোমার বর্ণনা করতে পারতুম না । তোমার মনের মধ্যে এমন একটি স্বচ্ছতা আছে যে, আকাশের সমস্ত আলো সহজেই প্রতিবিম্বিত হয়। তোমার সব-কিছুর মধ্যে ছড়িয়ে-পড়া সেই আলো আমি দেখতে পাই । তোমার মূপে, তোমার হাসিতে, তোমার কথায়, তোমার স্থির হয়ে বসে থাকায়, তোমার রাস্ত দিয়ে চলায় । আজি মাঝে মাঝে আমার ছায়ারে দুলায়ে পেলায়ো তারি এক ধারে, সে-ছায়ারি সাথে হাসিয়া মিলায়ো কলধ্বনি ;