পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S)3 o রবীন্দ্র-রচনাবলী কিন্তু এমন হালকা করে বঁাচার বোঝাট ষে বড়ঙে বেশি ; যে-নদীর জল মরেছে তার মন্থর স্রোতের ক্লাস্তিতে জঞ্জাল জমে, ষে স্বল্প সে নিজেকে বইতে গিয়ে ক্লিষ্ট হয়। তাই ও বলছে— মন্দচরণে চলি পারে, যাত্রা হয়েছে মোর সাঙ্গ । সুর থেমে আসে বারে বারে ক্লাস্তিতে আমি অবশাঙ্গ । কিন্তু এই ক্লাস্তিতেই কি ওর শেষ ? ওর ঢিলে তারের বীণাকে নতুন করে বঁাধবার আশা ও পেয়েছে, দিগন্তের ওপারে কার পায়ের শব্দ ও যেন শুনল – সুন্দরী ওগো শুকতারা, রাত্রি না যেতে এস তুর্ণ। স্বপ্নে যে-বাণী হল হারা জাগরণে করে তারে পূর্ণ । উদ্ধারের আশা আছে, কানে আসছে জাগ্রত বিশ্বের বিপুল কলরব, সেই মহাপথের দূর্তী তার প্রদীপ হাতে করে এল বলে— নিশীথের তল হতে তুলি লহ তারে প্রভাতের জন্ত । আঁধারে নিজেরে ছিল ভুলি, আলোকে তাহারে করো ধনু । যেখানে সুপ্তি হল লীনা, যেথা বিশ্বের মহামন্দ্র, অপিচু সেথা মোর বীণা আমি আধো-জাগ্রত চন্দ্র । এই হতভাগা চাদটা তো আমি । কাল সকালবেলা চলে যাব । কিন্তু চলে যাওয়াকে তো শূন্ত রাখতে চাই নে। তার উপরে আবির্ভাব হবে সুন্দরী শুকতারার, জাগরণের গান নিয়ে। অন্ধকার জীবনের স্বপ্নে এতদিন যা অস্পষ্ট ছিল, সুন্দরী শুকতারা তাকে প্রভাতের মধ্যে সম্পূর্ণ করে দেবে। এর মধ্যে একটা আশার জোর আছে, ভাবী প্রত্যুষের একটা উজ্জ্বল গৌরব আছে, তোমার ওই রবি ঠাকুরের কবিতার মতো মিইয়ে পড়া হাল-ছাড়া বিলাপ নয় ।”