পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○8 রবীন্দ্র-রচনাৰলী জানতে দেওয়া হবে না। তার আগেই শত্রুপক্ষকে আর রণক্ষেত্রটাকে দেখে আসা চাই। তার পর দেখা যাবে মায়াবিনীর কত শক্তি । প্রথমে এসেই চোখে পড়ল অমিতর উপর ঘন এক পোচ গ্রাম্য রং । এর আগেও ওর দলের সঙ্গে অমিতর ভাবের মিল ছিল না। তবু সে তখন ছিল প্রখর নাগরিক, চাচা মাজা ঝকঝকে । এখন কেবল যে খোলা হাওয়ায় রংটা কিছু ময়লা হয়েছে তা নয়, সবসুদ্ধ ওর উপর যেন গাছপালার আমেজ দিয়েছে। ও যেন কাচা হয়ে গেছে এবং ওদের মতে কিছু যেন বোকা । ব্যবহারটা প্রায় যেন সাধারণ মানুষের মতো । আগে জীবনের সমস্ত বিষয়কে হাসির অস্ত্র নিয়ে তাড়া করে বেড়াত, এখন ওর সে শখ নেই বললেই হয় ; এইটেকেই ওরা মনে করেছে নিদেন কালের লক্ষণ। সিসি একদিন ওকে স্পষ্টই বললে, “দূর থেকে আমরা মনে করছিলুম তুমি বুঝি খাসিয়া হবার দিকে নামছ। এখন দেখছি তুমি হয়ে উঠেছ, যাকে বলে গ্রীন, এখানকার পাইনগাছের মতে, হয়তো আগেকার চেয়ে স্বাস্থ্যকর, কিন্তু আগেকার মতো ইন্টারেটিং নয়।” অমিত ওঅর্ডসওঅর্থের কবিতা থেকে নজির পেড়ে বললে, প্রকৃতির সংসর্গে থাকতে থাকতে নির্বক নিশ্চেতন পদার্থের ছাপ লেগে যায় দেহে মনে প্রাণে, যাকে কবি

  • Zos.En “mute insensate things.”

শুনে সিসি ভাবলে, নির্বাক নিশ্চেতন পদার্থকে নিয়ে আমাদের কোনো নালিশ নেই, যারা অত্যন্ত বেশি সচেতন আর যারা কথা কইবার মধুর প্রগলভতায় স্বপঢ়, তাদের নিয়েই আমাদের ভাবনা । ওরা আশা করেছিল লাবণ্য সম্বন্ধে অমিত নিজেই কথা তুলবে। একদিন দুদিন তিনদিন যায় সে একেবারে চুপ। কেবল একটা কথা আন্দাজে বোঝা গেল, অমিতর সাধের তরণী সম্প্রতি কিছু বেশিরকম ঢেউ খাচ্ছে । ওরা বিছান থেকে উঠে তৈরি হবার আগেই অমিত কোথা থেকে ঘুরে আসে, তার পরে মুখ দেখে মনে হয় ঝড়ে হাওয়ায় যে-কলাগাছের পাতাগুলো ফালি ফালি হয়ে ঝুলছে তারই মতে শতদীর্ণ ভাবখানা। অারও ভাবনার কথাটা এই যে, রবি ঠাকুরের বই কেউ কেউ ওর বিছানায় দেখেছে। ভিতরের পাতায় লাবণ্যর নাম থেকে গোড়ার অক্ষরট লাল কালি দিয়ে কাটা । বোধ হয় নামের পরশপাথরেই জিনিসটার দাম বাড়িয়েছে । অমিত ক্ষণে ক্ষণে বেরিয়ে যায়। বলে, খিদে সংগ্রহ করতে চলেছি। খিদের জোগানটা কোথায়, আর খিদেটা খুবই যে প্রবল তা অন্তদের অগোচর ছিল না । কিন্তু তারা এমনি অবুকের মতো ভাব করত যেন হাওয়ায় ক্ষুধাকরত ছাড়া শিলঙে জার