পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রসঙ্গ-কথা > কলিকাতায় প্লেগ-রেগুলেশন যে উগ্ৰমূৰ্তিধারণ করিয়া উঠে নাই, সেজন্য আমাদের নব বঙ্গাধিপের প্রতি বঙ্গদেশের কৃতজ্ঞতা উচ্ছসিত হইয়া উঠিয়াছে। যমদূতের উৎপীড়নের সহিত রাজদূতের বিভীষিকার যোগ হইলে প্রজাগণ একেবারে হতাশ হইয়া পড়িত। কিন্তু সেইটে নিবারণ হইয়াছে বলিয়াই যে একমাত্র আনন্দ তাহা নহে ; ইহা অপেক্ষ গুরুতর সুখের কথা আছে । ইতিপূর্বে আমরা লক্ষ্য করিয়া দেগিয়াছি, প্রজার যপন কোনো একটা বিষয়ে একটু বেশি জিদ করিয়া বসে তখন গবর্মেন্ট তাহাদের অনুরোধ পালন করিতে বিশেষ কুষ্ঠিত হইয়া থাকেন, পাছে প্রজা প্রশ্রয় পায় । সেইজন্ত আমাদের শিক্ষিত লোকের যে-সমস্ত কোলাহলকে পোলিটিকাল অ্যাজিটেশন নাম দিয়া থাকেন তাহাকে উদ্দেশুসিদ্ধির পক্ষে আমরা সদুপায় বলিয়: মনে করি না । কারণ, গবমেণ্ট এবং ভারতবর্ষীয় ইংরেজগণ যখন এই সকল অ্যাজিটেশনওআলাকে আপনাদের বিরুদ্ধদল বলিয়া গণ্য করিয়া লইয়াছেন, তখন র্তাহাদের সংগত প্রস্তাবেও কর্ণপাত করিতে কর্তৃপক্ষের দ্বিধা হয়, মনে হয়, এ-কথা পাছে সাধারণে মনে করে যে, আমরা দায়ে পড়িয়া হার মানিয়া ইচ্ছার বিরুদ্ধে কয়েকজন উদ্ধত লোকের বাকশক্তিদ্বারা চালিত হইলাম, পাছে কেহ ভুলিয়া যায় যে, ভারতবর্ষে আমাদের ইচ্ছাই শেষ ইচ্ছা । অ্যাজিটেশনকারিগণও ভিতরে ভিতরে তাহার আভাস পাইয়াছেন তাহাদের ব্যবহারে এরূপ অনুমান করা যায়। কারণ, এবারে যে নিদারুণ আইনের দ্বারা নাটু-হরণ ব্যাপার ঘটিল সে-সম্বন্ধে আমাদের দেশের বাগ্মী-সভাসমূহ অভূতপূর্ব বিজ্ঞতাসহকারে সুদীর্ঘকাল নিস্তব্ধ ছিলেন । আমরা গোল করিতে বসিলেই পাছে গবর্মেন্টের মন আরও বিগড়িয়া যায় হয়তো এ-আশঙ্কা তাহাদের ছিল । যাহাই হউক বর্তমান ব্যাপারে আমাদের বিশেষ আনন্দের বিষয় এই যে, গবর্মেন্ট প্রজাদের মন রক্ষা করিতে লজ্জা বা সংকোচ বোধ করেন নাই। গবর্মেন্ট এবং এ-দেশী ইংরেজসম্প্রদায় বলিতেছেন যে, প্রজারা যখন পুব-দেশী, এবং পরিবারমণ্ডলীর প্রতি হস্তক্ষেপ করার বিরুদ্ধে উহাদের যখন এতই দৃঢসংস্কার তখন সেটা বিবেচনা করিয়া এবং যথাসম্ভব বাচাইয়া কাজ করাই রাজার কর্তব্য।