পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఆ(8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আমরা ফর্ম ধরিয়া ধরিয়া উচ্চস্বরে চাহিতে আরম্ভ করিলাম—ভাঙা হইতে উত্তর আসিল, “এস না, তোমরা নামিয়া আসিয়া লইয়া যাও।” কিন্তু আমাদের নামিবার ঘাট নাই ; আর-আর সমস্ত বড়ো-বড়ো জাহাজে পথ আটক করিয়া নোঙর ফেলিয়া বসিয়া আছে, তাহার এক-ইঞ্চি নড়িতে চায় না । এদিকে ফর্দ আওড়াইতে আওড়াইতে আমাদের গলা ভাঙিয়া গেল—দিন অবসান হুইয়। আসিল । কখনো বা রাগ করিয়া যাহা মুখে আসে তাহাই বলি, কখনো বা চোখের জলে কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া আসে । কেহ নিষেধও করে না, কেহ পথও ছাড়ে না ; বাধাও নাই, সুবিধাও নাই । আর-আর সকলে দিব্য কেনাবেচা করিয়া যাইতেছে, নিশান উড়িতেছে, আলে। জলিতেছে, ব্যাও বাজিতেছে । আমরা সন্ধ্যাকাশের অবিচলিত নক্ষত্ররাজি ও রাজবাতায়নের অনিমেষ দ্বীপমালার প্রতি লক্ষ্য করিয়া সকলের পশ্চাং হইতে আমাদের “দরিদ্রাণাং মনোরথা:” অক্ষুন্ন অধ্যবসায়ের সহিত অবিশ্রাম নিবেদন করিয়া চলিলাম। এইভাবে কতদিন, কত বৎসর কাটিত, তাহা বলিতে পারি না । এমন সময় এই নিঃসহ নিশ্চলতার মধ্যে বিধাতার রুপায় পশ্চিম-আকাশ হইতে হঠাং একটা বড়োরকম ঝড় উঠিল । আমাদের দেশহিতের জাহাজটাকে পূবের মুগে হুহু করিয়া ছটাইয়া চলিল অবশেষে ষেপানে আসিয়া তীর পাইয়া বাচিয়া গেলাম, চাহিয়া দেখিলাম, সে যে আমাদের ঘরের ঘাট । সেখানে নিশান উড়ে না, ব্যাও বাজে না, কিন্তু পুরলক্ষ্মীরা যে হুলুধ্বনি দিতেছেন, দেবালয়ে যে মঙ্গলশখ বাজিয়া উঠিল। এতদিন অভূক্ত থাকিয়৷ পরের পাকশাল হইতে কেবল বড়ে-বড়ো ভোজের গন্ধটা পাইতেছিলাম, আজ ষে দেখিতে দেখিতে সম্মুখে পাত পাড়িয়া দিল । আমরা জানিতাম না, এ যজ্ঞে আমাদের মাতা আমাদের জঙ্ক এতদিন সজলচক্ষে অপেক্ষা করিয়া ছিলেন । তিনিই আজ দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর সুরেন্দ্রনাথের শিরশ্চন করিয়া তাহাকে আপন কোলের দিকে টানিয়াছেন। আমরা আজ সুরেন্দ্রনাথকে জিজ্ঞাসা করি, তিনি সেই পশ্চিম-বন্দরের শাদা-পাথরে বাধানো সোনার দ্বীপে এমন স্বস্নিগ্ধ সার্থকতা একদিনের জন্যও লাভ করিয়াছেন ? —এমন আশাপরিপূর্ণ অমৃতবাণী স্বপ্নেও গুনিয়াছেন ? বিধাতার কৃপাবড়ে সুরেন্দ্রনাথের সেই জাহাজকে যে ঘাটে আনিয়া ফেলিয়াছে, ইহার নাম আত্মশক্তি। এইখানে যদি আমরা কেনাবেচা করিতে পারিলাম, তো পারিলাম—নতুবা অতলম্পর্শ লবণাকৃগর্ভে ডুবিয়া মরাই আমাদের পক্ষে শ্রেয় হইবে। কাপ্তেন, এখানকার প্রত্যেক ঘাটে ঘাটে আমাদের বিস্তর