পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাল্গুনী ১১৯ কোটাল। আমি পড়ার কোটাল । ń, দাদা । তা উত্তম হল— আপনাদের কিছু শোনাতে ইচ্ছা করি । বাজে জিনিস না— কাজের কথা । মাঝি। বেশ, বেশ । আহা, বলেন, বলেন । কোটাল। আমাদের গুরু বলেছিলেন, ভালো কথা বলবার লোক অনেক মেলে কিন্তু ভালো কথা যে-মরদ খাড়া দাড়িয়ে শুনতে পারে তাকেই সাবাস । ওটা ভাগ্যের কথা কিনা। তা, বলো ঠাকুর বলে । দাদা । আজ পথে যেতে যেতে দেখলুম, রাজপুরুষ একজন বন্দীকে নিয়ে চলেছে। শুনলুম, সে কোনো শ্রেষ্ঠী, তার টাকার লোভেই রাজা মিথ্যা ছুতো করে তাকে ধরেছে। শুনে আমি নিকটেই মুদির দোকানে বসে এই শ্লোকটি রচনা করেছি। দেখো বাপু, আমি বানিয়ে একটি কথাও লিখি মে। আমি যা লিখব রাস্তায় ঘাটে তা মিলিয়ে নিতে পারবে । ঠাকুর, কী লিখেছ শুনি । দাদা । আত্মরস লক্ষ্য ছিল ব’লে ইক্ষু মরে ভিক্ষুর কবলে । ওরে মূখ, ইহা দেখি শিক্ষ— ফল দিয়ে রক্ষা পায় বৃক্ষ । বুঝেছ ? রস জমায় বলেই ইক্ষু বেটা মরে, যে গাছ ফল দেয় তাকে তো কেউ মারে না । কোটাল। ওহে মাঝি, খাসা লিখেছে হে ! মাঝি । ভাই কোটাল, কথাটির মধ্যে সার আছে । কোটাল। শুনলে মামুষের চৈতন্য হয় । আমাদের কায়েতের পে। এখানে থাকলে ওটা লিখে নিতুম রে । পাড়ায় খবর পাঠিয়ে দে । সর্বনাশ করলে রে ! o চন্দ্রহাস । ও ভাই মাঝি, তুমি যে বললে আমাদের সঙ্গে বেরবে, দাদার চৌপদী জমলে তো অণর— মাঝি । আরে রক্ষন মশায়, পাগলামি রেখে দিন । ঠাকুরকে পেয়েছি, দুটো ভালো কথা শুনে নিই— বয়েস হয়ে এল, কোন দিন মরব। ভাই, সেইজন্তেই তো বলছি, আমাদের সঙ্গ পেয়েছ, ছেড়ে না। চন্দ্রহাস । দণদণকে চিরদিনই পাবে কিন্তু আমরা একবার ম’লে বিধাতা দ্বিতীয়বার আর এমন ভুল করবেন না । O