পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী . ہ لا چ সমস্ত প্রাণীসংসারে কোথাও পাওয়া যাইত না ; অপরিণত পদস্থলিত ইহজীবনেই যদি আমাদের পরিসমাপ্তি হয়, তবে আমরা একান্ত দুর্বল ও হীন তাহার আর সন্দেহ নাই । কিন্তু আমাদের বিলম্ববিকাশ, আমাদের ক্রটি, আমাদের পাপ আমাদের সন্মুখবর্তী স্বদূর ভবিষ্যতের স্বচনা করিতেছে। বলিয়া দিতেছে, কড়াক্রান্তি কাকদস্তি চোখবাধা ঘানির বলদের জন্য ; সে তাহার পূর্ববর্তীদের পদচিহ্নিত একটি ক্ষুদ্র স্বগোলচক্রের মধ্যে প্রতিদিন পাক খাইয়া সর্ষপ হইতে তৈলনিপেষণ নামক একটি বিশেষনির্দিষ্ট কাজ করিয়া জীবননির্বাহ করিতেছে, তাহার প্রতি মুহূর্ত এবং প্রতি তৈলবিন্দু হিসাবের মধ্যে আনা যায়– কিন্তু যাহাকে আপনার সমস্ত মচুন্যত্ব অপরিমেয় বিকাশের দিকে লইয়া যাইতে হইবে, তাহাকে বিস্তর খুচরা হিসাব ছাটিয়া ফেলিতে হইবে । উপসংহারে একটি কথা বলিয়া রাখি, একিলিস এবং কচ্ছপ নামক একটি ন্যায়ের কুতর্ক আছে। তদ্বারা প্রমাণ হয় যে, একিলিস যতই দ্রুতগামী হউক, মন্দগতি কচ্ছপ যদি একত্রে চলিবার সময় কিঞ্চিম্মাত্র অগ্রসর থাকে, তবে একিলিস তাহাকে ধরিতে পারিবে না। এই কুতর্কে তার্কিক অসীম ভগ্নাংশের হিসাব ধরিয়াছেন— কড়াক্রান্তি-দস্তিকাকের দ্বারা তিনি ঘরে বসিয়া প্রমাণ করিয়াছেন যে, কচ্ছপ চিরদিন অগ্রবর্তী থাকিবে । কিন্তু এ দিকে প্রকৃত কর্মভূমিতে একিলিস এক পদক্ষেপে সমস্ত কড়াক্রান্তি-দস্তিকাক লঙ্ঘন করিয়া কচ্ছপকে ছাড়াইয়া চলিয়া যায়। তেমনই আমাদের পণ্ডিতেরা সুহ্মযুক্তি দ্বারা প্রমাণ করিতে পারেন যে, কড়াক্রাস্তি-দন্তিকাক লইয়া আমাদের কচ্ছপসমাজ অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে অগ্রসর হইয়া আছে ; কিন্তু দ্রুতগামী মানবপথিকেরা এক-এক দীর্ঘ পদক্ষেপে আমাদের সমস্ত সূক্ষ্ম প্রমাণ লঙ্ঘন করিয়া চলিয়া যাইতেছে ; তাহাদিগকে যদি ধরিতে চাই তবে চুল-চের হিসাব ফেলিয়া দিয়া রীতিমত চলিতে আরম্ভ করা যাক। আর তা যদি না চাই, তবে অন্ধ আত্মাভিমান বৃদ্ধি করিবার জন্য চোখ বুজিয়া পাণ্ডিত্য করা অলস সময়যাপনের একটা উপায় বটে। তাহাতে আমাদের পুণ্য প্রমাণ হয় কি না জানি না, কিন্তু নৈপুণ্য প্রমাণ হয়। > રાજે જે