পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬২ রবীন্দ্র-রচনাবলী আমাদের বিশ্বাস বহুবচনেও বাংলা একসময়ে হিন্দির অনুযায়ী ছিল এবং সংস্কৃত ষষ্ঠী বহুবচনের আনাং বিভক্তি যেখানে হিন্দিতে সংক্ষিপ্ত সামুনাসিকে পরিবর্তিত হইয়াছে, বাংলায় তাহ দ আকার ধারণ করিয়াছে এবং কৃত শব্দের অপভ্রংশ কের তাহার সহিত বাহুল্য প্রয়োগরূপে যুক্ত হইয়াছে। তুলসীদাসে আছে, জীবকুকের কলেস, এই জীবকুকের শব্দের রূপান্তর জীবদিগের হওয়া কিছুই অসম্ভব নহে । ন হইতে দ হওয়ার একটি দৃষ্টাস্ত সকলেই অবগত আছেন, বানর হইতে বান্দর ও বাদর। কর্মকারকে জীবকুকে হইতে জীবদিগে শব্দের উদ্ভব হওয়া স্বাভাবিক। আমাদের নূতন স্বষ্ট বাংলায় আমরা কর্মকারকে দিগকে লিখিয়া থাকি, কিন্তু কথিত ভাষায় মনোযোগ দিলে কর্মকারকে দিগে শব্দের প্রয়োগ অনেক স্থলেই শুনা যায় । বোধ হয় সকলেই লক্ষ করিয়া থাকিবেন, সাধারণ লোকদের মধ্যে— আমাগের তোমাগের শব্দ প্রচলিত আছে। এরূপ প্রয়োগ বাংলার কোনো বিশেষ প্রদেশে বদ্ধ কি না বলিতে পারি না, কিন্তু নিম্নশ্রেণীর লোকদের মুখে বারংবার শুনা গিয়াছে, ইহা নিশ্চয় । অামাগের তোমাগের শব্দের মধ্যস্থলে দ আসিবার প্রয়োজন হয় নাই ; কারণ, ম সাচুনাসিক বর্ণ হওয়াতে পার্শ্ববর্তী সামুনাসিককে সহজে আত্মসাৎ করিয়া লইয়াছে। যাগের তাগের শব্দ ব্যবহার করিতে শুনা যায় নাই । এই মতের বিরুদ্ধে সন্দেহের একটি কারণ বর্তমান আছে । আমরা সাধারণত, নিজদের লোকদের গাছদের না বলিয়া, নিজেদের লোকেদের গাছেদের বলিয়া থাকি । জবল্লুকের— জীবস্তুের— জীবন্দের– জীবদের, এরূপ রূপান্তরপর্যায়ে উক্ত একারের স্থান কোথাও দেখি না । মেওয়ারি কাব্যে ষষ্ঠী বিভক্তির একটি প্রাচীন রূপ দেখা যায় হংদো। কাশ্মীরিতে ষষ্ঠ বিভক্তির বহুবচন হিংদ ; জনহিংদ বলিতে লোকদিগের বুঝায়। বীম্‌ সাহেবের মতে এই হংদে ভূ ধাতুর ভবস্ত হইতে উৎপন্ন। যেমন কৃত একপ্রকারের সম্বন্ধ তেমনই ভূত আর-একপ্রকারে সম্বন্ধ । যদি ধরিয়া লওয়া যায়, জনহিন্দকের জনহিন্দের শব্দের একপর্যায়গত শব্দ জনদিগের জনেদের, তাহা হইলে নিয়মে বাধে না। ঘরহি স্থলে যদি ‘ঘরে’ হয় তবে জনহি স্থলে 'জনে হওয়া অসংগত নহে। বাংলার প্রতিবেশী আসামি ভাষায় হঁত শব্দ বহুবচনবাচক । মানুহহঁত অর্থে মানুষগণ বুঝায়। ইত এবং হংদ শব্দের সাদৃশু আছে। কিন্তু হংদ সম্বন্ধবাচক বহুবচন, ইত বহুবচন কিন্তু সম্বন্ধবাচক নহে ।