পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२९ রবীন্দ্র-রচনাবলী এ কথা যদি বল তবে কোথায় গিয়া দাড়াইতে হয় বলা যায় না। তুমি বলিতেছ নিষ্কামধর্মের পবিত্র মহত্ব আছে ; অতএব স্বামীর মৃত্যুর পর কামনা বিসর্জন দিয়া সংসারধর্ম পালন করিবার যে-অবসর পাওয়া যায়, তাহা অতি পবিত্র অবসর, সে-অবসর অবহেলা করা উচিত নহে। এখন তোমার সাম্য বৈষম্যের দোহাই দিয়া জিজ্ঞাসা করি, নিষ্কামধৰ্মও কি হিন্দুদের দ্যায় অনুপাতবাদ মানিয়া চলেন । পুরুষের পক্ষেও নিষ্কামধর্ম কি পবিত্র নহে, অতএব কষ্টসাধ্য হইলেও হিন্দুবিবাহের পরম একীকরণ এবং আধ্যাত্মিক মিলনের দ্বারা অনিবার্যবেগে চালিত হইয়া স্ত্রীবিয়োগে পুরুষেরও নিষ্কামধর্মব্রত গ্রহণ করা কেন অবশ্যকর্তব্য বলিয়া স্থির হয় নাই । তাহার বেলায় ক খ ও অনুপাতবাদের হেঁয়ালিধূম বিস্তার করিবার তাৎপর্য কী। পবিত্র একনিষ্ঠ অচল দাম্পত্যপ্রেম পুরুষেরও মহত্ত্বের লক্ষণ ও হৃদয়ের উন্নতির অন্যতম কারণ, তাহা কোন অনুপাতবাদী অস্বীকার করিতে পারেন। তবে এমন যদি বল যে, আধ্যাত্মিকতা ও পবিত্রতার কথা ছাড়িয়া দাও, হিন্দুবিবাহ সাংসারিক সুবিধার জন্ত, তবে সে এক স্বতন্ত্র কথা । তাহা হইলে অনুপাতকদের হিসাব কাজে লাগিতে পারে। অক্ষয়বাবু বলেন : অপত্যোৎপাদনের জন্তই বিবাহের প্রয়োজন, এ সিদ্ধান্ত বিবাহের অতি নিকৃষ্ট ভাগ, অতি সামান্ত ভাগ দেখিয়াই হইয়াছে। হিন্দুবিবাহের অতি উচ্চতর, অতি প্রশস্ততর, অতি পবিত্র, সম্পূর্ণ আধ্যাত্মিক উদেখ আছে , সকল ব্যাপারেই হিন্দুর আধ্যাত্মিক দিকে দৃষ্টি প্রখর । হিন্দুর বিবাহব্যাপারেও আধ্যাত্মিক ভাবটা উজ্জ্বলরাপে প্রতিভাত । অপত্যোৎপাদনের জন্তই বিবাহের প্রয়োজনীয়ত। যে বিবাহের অতি নিকৃষ্টভাগ, অতি সামান্তভাগ এরূপ আমার বিশ্বাস নহে। এবং প্রাচীন হিন্দুরা যে ইহাকে নিকৃষ্ট ও সামান্ত জ্ঞান করিতেন, আমার তাহা বোধ হয় না। শ্রদ্ধাস্পদ পণ্ডিত শ্ৰীযুক্ত কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য ‘ভারতবর্ষের ধর্মপ্রণালী’ নামক প্রবন্ধে বলিয়াছেন : মনু প্রভূতি ধর্মশাস্ত্রকারের যাহা কিছু উপদেশ করিয়াছেন, সমাজই সে সকলের কেন্দ্রস্থান ; সমাজের কল্যাণ লক্ষ্য করিয়াই সেই-সকল ব্যবস্থার সৃষ্টি করা হইয়াছে । অতএব সমাজের কল্যাণের প্রতি যদি দৃষ্টিপাত করা যায় তবে অপত্যোৎপাদন বিবাহের নিতান্ত সামান্ত ও নিকৃষ্ট উদ্দেশু কেহই বলিবেন না । স্বস্থকায় সর্বাঙ্গসম্পূর্ণ প্রফুল্লচিত্ত স্বচরিত্র সস্তান উৎপাদন অপেক্ষা সমাজের মঙ্গল আর কিসে সাধিত হইতে পারে । পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভাৰ্য, এ কথা আমাদের সাধারণের মধ্যে প্রচলিত। মন্থ কহিতেছেন : প্রজনাৰ্থং মহাভাগা পূজাৰ্হাগুহীপ্তয়: ।