পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী را 8d লেখিকা একটি অতিশয় রোমহর্ষণ ঘটনার উল্লেখ করিয়াছেন । জেনাবের যখন দশ বৎসর বয়স তখন তাহার বাপ তাহাকে হীর-জহরতে জড়িত করিয়া পুত্তলিবেশে আপনার চেয়ে বয়সে ও ধনে সন্ত্রমে বড়ো একটি বৃদ্ধ স্বামীর হস্তে সমর্পণ করিলেন । একবার স্বামীগৃহে পদার্পণ করিলে বাপমায়ের সহিত সাক্ষাৎ বহু সাধনায় ঘটে, বিশেষত যখন র্তাহারা কুলে মানে স্বামীর অপেক্ষা ছোটো । জেনাব দুই ছেলের মা হইল, তথাপি বাপের সহিত একবার দেখা হইল না। নানা উপদ্রবে পাগলের মতো হইয়া একদিন সে দাসীর ছদ্মবেশে পলাইয়া পিতার চরণে গিয়া উপস্থিত হইল। কাদিয়া বলিল, “বাবা আমাকে মারিয়া ফেলো, কিন্তু শ্বশুরবাড়ি পাঠাইয়ো না।” ইহার পর তাহার প্রাণসংশয় পীড়া উপস্থিত হইল। তাহার অবস্থা ও আকৃতি দেখিয়া বাপের মনে বড়ো আঘাত লাগিল । বাপ জামাতাকে বলিয়া পাঠাইলেন, “কস্তার প্রাপ্য হিসাবে এক পয়সাও চাহি না, বরঞ্চ তুমি যদি কিছু চাও তো দিতে প্রস্তুত আছি, তুমি তোমার স্ত্রীকে মুসলমান বিধি অনুসারে পরিত্যাগ করো।” সে কহিল, “এত বড়ো কথা ! আমার অন্তঃপুরে হস্তক্ষেপ ! মশাল্লা ! এত সহজে যদি” সে নিস্কৃতি পায় তবে যে আমার দাড়িকে সকলে উপহাস করিবে ।” তাহার রকমসকম দেখিয়া দূতেরা বাপকে আসিয়া কহিল, “যে-রকম গতিক দেখিতেছি তোমার মেয়েকে একবার হাতে পাইলেই বিষম বিপদ ঘটাইবে।” বাপ বহুযত্নে কন্যাকে লুকাইয়া রাখিলেন । বলিতে হৃৎকম্প হয়, পাষণ্ড স্বামী নিজের অপোগগু বালক দুটিকে ঘাড় মটকাইয়া বধ করিয়া তাহাদের সদ্যমৃত দেহ স্ত্রীর নিকট উপহারস্বরূপ পাঠাইয়া দিল । মা কেবল একবার আর্তম্বরে চীৎকার করিয়া আর মাথা তুলিল না, দুইচারি দিনেই দুঃখের জীবন শেষ করিল। এরূপ অমানুষিক ঘটনা জাতীয় চরিত্রস্থচক দৃষ্টান্তস্বরূপে উল্লেখ করা লেখিকার পক্ষে দ্যায়সংগত হইয়াছে বলিতে পারি না, কিন্তু ইহা নিশ্চয় যে, একীকরণের মাহাত্ম্য সম্বন্ধে যিনিই যত বড়ো বড়ো কথা বলুন, মানুষের প্রতি মানুষের অধিকারের একটা সীমা আছে ; পৃথিবীর প্রাচ্য প্রদেশে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অধিকার সেই সীমা এতদূর অতিক্রম করিয়াছে যে, আধ্যাত্মিকতার দোহাই দিয়া কতকগুলা আগড়ম-বাগড়ম বকিয়া আমাদিগকে কেবল কথার ছলে লজ্জা নিবারণ করিতে হইতেছে । > &なb"