পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(to 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ইংরাজিশিক্ষায় কৃতবিদ্য ঐযুক্ত লোকেন্দ্রনাথ পালিত ইংরেজিশিক্ষার ফলাফল সম্বন্ধে যে-কথা বলিয়াছেন ‘শিক্ষাসঙ্কট প্রবন্ধে তাহার উচিত অর্থ গ্রহণ হয় নাই, আমার এই বিশ্বাস। শিক্ষাটা কতদূর হয় বা না-হয়, ইহাই তাহার আলোচ্য বিষয় ছিল। তাহার সমস্ত প্রবন্ধে কোথাও তিনি বলেন নাই যে, পূর্বাপেক্ষা এক্ষণে লোক ঘুষ অধিক লইতেছে অথবা জাল করিতে অধিকতর পারদর্শিতা লাভ করিয়াছে। তিনি কেবল এই বলিয়াছেন যে, বর্তমান প্রণালীতে ছাত্রেরা কেবল ষে ভালো শেখে না তাহা নহে পরস্তু ভুল শেখে। কিন্তু প্রতিবাদক সমস্ত প্রবন্ধের সহিত ভাব না মিলাইয়া একটিমাত্র বিচ্ছিন্ন পদ অবলম্বন করিয়া সবিস্তারে দেখাইতে চেষ্টা করিয়াছেন যে, পুরাকালে লোকে ঘুষ লইত, জালিয়াতকে আশ্রয় দিত, এবং বাস্তুকির গাত্ৰকণ্ডু অপনোদনেচ্ছা ভূমিকম্পের হেতু বলিয়া বিশ্বাস করিত। লেখক আমার সম্বন্ধে বলিয়াছেন : যাহার মত এক্ষণ আলোচিত হইল তিনি তো ইংরেজিশিক্ষা নিফল এইমাত্র বলিয়াই ক্ষান্ত । 尊 —যদি সত্যই আমি এইমাত্র বলিতাম তবে কোথায় গিয়া ক্ষান্ত হইতাম বলা শক্ত ; তবে এখনকার ছেলেরা আমাকে ঢ়িল ছুড়িয়া মারিত, এবং বঙ্কিমবাবু, গুরুদাসবাবু ও আনন্দমোহন বসু মহাশয় কখনোই আমার লেখার তিলমাত্র অমুমোদন করিতেন नी । লেখক সর্বশেষে বলিয়াছেন : আলোচ্য প্রবন্ধগুলি পড়িয়া আর-একটি ভাব মনে উদয় হয়— সন্দেহ উঠে যে, লেখকগণ হয়তে অনেক সময় ভুলিয়া যান যে, এ দেশে ধান জন্মে আর বিলাতে জন্মায় ওক— এট ভারতবর্ষ, ইংলও নয়। আমরা ঠিক সেই কথাটাই ভুলি না ; আমরাই বারংবার বলিতেছি, এ দেশে ধান জন্মে আর বিলাতে জন্মায় ওক । এখানকার দেশী ভাষা বাংলা, ইংরেজি নহে। যদি কর্ষণ করিয়া সম্যক ফললাভ করিবার ইচ্ছা হয় তবে বাংলায় করিতে হইবে, নতুবা ঠিক ‘কালচার’ হইবে না। আমরা এ কথা স্বপ্নেও ভুলি না যে, এ দেশে ধান জন্মে আর বিলাতে জন্মায় ওক । এইজন্তই আমরা বাংলায় যাহা পাই তাহাকেই বহুমান্ত করি ; ইংরেজির সহিত তুলনা করিয়া তাহাকে হতাদর করিবার চেষ্টা করি না। এইজন্তই আমরা বাঙালির ১ শিক্ষাপ্রণালী ৷ সাধনা, ১২৯৯ মাঘ ।