পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শব্দতত্ত্ব (?V)○ এখন আমার নামে উলটা অভিযোগ আসিয়াছে যে, আমি এই চলিত কথাগুলা ও তাহার প্রত্যয় সংগ্রহে সহায়তা করিয়া বাংলাভাষাটাকেই মাটি করিবার চেষ্টায় আছি । যে-কথাগুলা লইয়া আমি আলোচনা করিয়াছিলাম, তাহাদিগকে বাংলায় রাখা বা বাংলা হইতে খারিজ করিয়া দেওয়া আমার বা আর-কাহারও সাধ্যই নহে । তাহারা অাছে, এবং কাহারও কথায় তাহারা নিজের স্থান ছাড়িবে না । জগতে যে-কোনো জিনিসই আছে, তাহ ছোটো হউক আর বড়ো হউক, কুৎসিত হউক আর স্বশী হউক, প্রাদেশিক হউক আর নাগরিক হউক, তাহার তত্ত্বনির্ণয় বিজ্ঞানের কাজ। শরীরতত্ত্ব কেবল উত্তমাঙ্গেরই বিচার করে এমন নহে, পদাঙ্গুলিকেও অবজ্ঞ করে না। বিজ্ঞানের ঘৃণা নাই, পক্ষপাত নাই। কিন্তু এই বাংলা চলিত কথাগুলি এবং সংস্কৃত-ব্যাকরণনিরপেক্ষ বিশেষ নিয়মগুলির উল্লেখমাত্র করিলেই বাংলাভাষা নষ্ট হইয়া যাইবে, এমন ধারণা কেন হয় । হিন্দুঘরে গ্রাম্য আত্মীয়ের, দরিদ্র আত্মীয়েরও তো প্রবেশনিষেধ নাই। যদি কেহ নিষেধ করিতে উদ্যত হয়, তবে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলে সে হয়তো জবাব দেয়, উহারা আত্মীয় বটে কিন্তু কুলত্যাগ করিয়া জাতিভ্রষ্ট হইয়াছে। বাংলায় যাহা-কিছু সংস্কৃতের নিয়ম মানে না, তাহাকে একদল লোক কুলত্যাগী বলিয়া ত্যাগ করিতে চান। এবং সংস্কৃতের নিয়মকে বাংলায় সর্বত্রই প্রতিষ্ঠিত করিতে র্তাহীদের চেষ্টা। র্তাহীদের বিশ্বাস, স্বরচিত ব্যাকরণে র্তাহারা সংস্কৃত-নিয়মকে জাহির করিলে এবং বাংলানিয়মের উল্লেখ না করিলেই, বাংলাভাষা সংস্কৃত হইয়া দাড়াইবে । র্তাহারা মনে করেন, ‘পাগলাম’ এবং ‘সাহেবিয়ানা’ কথা যে বাংলায় আছে, ও ‘অাম এবং ‘আনা’ নামক সংস্কৃতের প্রত্যয় দ্বারা তাহার সিদ্ধ, এ কথা না তুলিলেই আপদ চুকিয়া যায়— এবং যখন প্রয়োজন হয়, তখন উন্মত্ততা ও ইংরাজমুকুতিশীলত্ব কথা ব্যবহার করিলেই গ্রাম্য কথা দুটার অস্তিত্বই ঢাকিয়৷ রাখা যাইবে । বাংলাব্যাকরণ যে প্রায় সংস্কৃতব্যাকরণ, ইহাই প্রতিপন্ন করিবার জন্য র্তাহারা বাংলার কারক-বিভক্তিকে সংস্কৃত কারক-বিভক্তির সঙ্গে অস্তত সংখ্যাতেও সমান বলিতে চান । সংস্কৃতভাষায় সম্প্রদানকারক বলিয়া একটা স্বতন্ত্র কারক আছে, বিভক্তিতেই তাহার প্রমাণ। বাংলায় সে কারক নাই, কর্মকারকের মধ্যে তাহ সম্পূর্ণ লুপ্ত। তৰু সংস্কৃত ব্যাকরণের নজিরে যদি বাংলাব্যাকরণে সম্প্রদানকারক জবরদস্তি করিয়া ›:!\oግ